বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্ত্রী, অতঃপর..

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্ত্রী, অতঃপর..

৯ বছরের সংসার। সেই সংসারে রয়েছে দুটি কন্যা সন্তান। তবুও পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার পালিয়ে গিয়েছিলেন মুন্নি বেগম। এরপরও সন্তানদের কথা ভেবে বারবারই স্বামী মোহাম্মদ আলী স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের বুদ্ধিতে স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাতের আঁধারে পরকীয়া প্রেমিকের কাছে তুলে দেন স্ত্রী মুন্নি বেগম। এরপর একটি পুকুর থেকে স্বামী মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের রাড়ী কান্দি এলাকায়। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে স্বামীর বাড়িতে বসে এভাবেই মোহাম্মদ আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন স্ত্রী মুন্নি বেগম। পরে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবরের পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলী মাদবরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মোহাম্মদ আলী মাদবর শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিন মাদবরের ছেলে। পেশায় তিনি অটোচালক ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ বছর আগে মোহাম্মদ আলী মাদবরের সঙ্গে বিয়ে হয় মুন্নি বেগমের। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুন্নি বেগম প্রায়ই তার পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের সঙ্গে পালিয়ে চলে যেতেন। কিছুদিন আগেও মুন্নি বেগম মামুনের সঙ্গে পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছোট সন্তানদের কথা ভেবে মোহাম্মদ আলী মাদবর তার স্ত্রী মুন্নিকে আবার ফিরিয়ে আনেন। এরপরও পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদার বিভিন্নভাবে মুন্নি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

গত বুধবার রাতে মোহাম্মদ আলী মাদবুর নিখোঁজ হওয়ার পরদিন পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদ আলীর স্বজনরা জানতে পারেন মোহাম্মদ আলী ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। এরপর বাড়িতে এসে মুন্নি বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিক মামুন ও তার সঙ্গীদের কাছে তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন মুন্নি বেগম। এরপর মুন্নি বেগমকে আটক করে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী।

নিহত মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা আসিফ মাদবর বলেন, চাচি দুই-তিন বার চলে গিয়েছিলেন। চাচা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বারবার ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু চাচি ভালো হয়নি। গত বুধবার রাতে প্রথমে চাচার কাছ থেকে সব টাকা-পয়সা নিয়ে নেন চাচি। এরপর চাচাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক মামুনের কাছে তুলে দেন। মামুন আমার চাচাকে মেরে ফেলছেন। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

একটি ভিডিওতে নিহত মোহাম্মদ আলী মাদবরের স্ত্রী মুন্নি বেগম বলেন, আমি চলে গিয়েছিলাম। এরপর ঝামেলা করে আমাকে আবারো এনেছিল মোহাম্মদ আলী। এই বাড়িতে আসার পরও মামুনের সঙ্গে আমার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। মামুন আমাকে বলেছিল, মোহাম্মদ আলী আমার (মামুনের) নামে মামলা করেছে। মামলা যদি চলমান থাকে তাহলে মোহাম্মদ আলীর ক্ষতি করব। কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম, মোহাম্মদ আলী মামলা তুলে ফেলবে, ক্ষতি করার দরকার নেই। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি বরং আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেছে, ‘আজ ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাব, এই ওষুধ মোহাম্মদ আলীকে খাওয়াতে হবে। নয়ত তোমার মেয়েদের মেরে ফেলব।’

মামুনের এমন কথায় আমি মোহাম্মদ আলীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি। এরপর মামুন এসে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে গেছে। মামুন যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যায়, তখন ওর সঙ্গে আরো দুইজন ছেলে ছিল। কিন্তু আমি তাদের চিনি না। যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন মোহাম্মদ আলী অজ্ঞান ছিল।

নিহতের বড় বোন আয়েশা বেগম বলেন, বারবার চলে যাওয়া সত্ত্বেও আমার ভাই মুন্নিকে এনেছিল। কিন্তু বুধবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে মুন্নি। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, নিহত মোহাম্মদ আলীর পরিবারে দাম্পত্য কলহ ছিল। বিষয়টি নিয়ে থানায় বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছিল। মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন স্বজনরা। বিষয়টি থানা পুলিশ টের পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়।

মুন্নি বেগম ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন- এমন ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, যদি স্বীকার করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ তাকে থানায় এনেছে। জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:০০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]