শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দণ্ডিত রাহুলের পরিণতি কী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

দণ্ডিত রাহুলের পরিণতি কী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বংশগত নামের পদবি নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে মানহানির মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন গুজরাটের আদালত। চার বছর আগে মামলাটি করেন বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি। ‘সব চোরের নামের পদবি মোদি হয় কী করে?’– মন্তব্যের জেরে রাহুলের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। সাজা কার্যকর হলে কংগ্রেস নেতা রাহুল সংসদ সদস্যপদ হারাতে পারেন। ভারতে সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে এই রায় হলো।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় সুরাটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতেই ছিলেন রাহুল। এনডিটিভি জানায়, সাজা হলেও রাহুল জামিন পেয়েছেন। তাঁকে আপিলের সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে শুনানি শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়।

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। দলটির নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, তাঁর ভাই রাহুল এতে ভড়কে যাবেন না; সত্য প্রকাশ থেকে ভীতও হবেন না। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই কখনোই ভীত নন, হবেনও না। তিনি সত্য বলেন, বলতে থাকবেন। তিনি দেশের মানুষের পক্ষে অব্যাহতভাবে কথা বলবেন।’ দ্য প্রিন্ট জানায়, রাহুলের মুখ বন্ধ করতে ক্ষমতাসীনরা নানা কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা আপিল করবেন এবং জিতবেন বলে মন্তব্য করেছেন।

তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলছে, কংগ্রেস নেতার শিক্ষা হওয়া উচিত। বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী পিযুষ গয়াল বলেন, সংসদ কিংবা আদালত– প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে অপমান করছেন রাহুল।

কর্ণাটকের ওয়েনাদ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাহুল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যটির কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নিরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে এ মন্তব্য করেছিলেন। হীরা ব্যবসায়ী নিরব মোদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর ললিত মোদি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাবেক প্রধান, যাঁর ওপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড।

রায়ের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় রাহুল টুইটারে মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে লিখেন, ‘আমার ধর্মের ভিত্তি সত্য ও অহিংসা। সত্যই আমার ঈশ্বর, অহিংসা তাকে পাওয়ার পথ।’ রায়ের আগে সকালেই তিনি সুরাট যান। সেখানকার কংগ্রেসের গুজরাট শাখার শীর্ষ নেতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগে থেকেই সুরাটে জড়ো হয়েছিলেন কংগ্রেসের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল রাহুল ‘শের-ই-হিন্দুস্তান’ (হিন্দুস্তানের বাঘ) লেখা পোস্টার। এ ছাড়া বিজেপিবিরোধী নানা স্লোগান লেখা ছিল।

রায়ের পর রাহুল অপ্রত্যাশিতভাবে আম আদমি পার্টির (আপ) সমর্থন পেয়েছেন। দলটির প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইটে লিখেন, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে অ-বিজেপি নেতা ও দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আপের মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু রাহুল গান্ধীকে এভাবে মানহানির মালায় ফাঁসানো ঠিক হলো না। জনগণ এবং বিরোধীদের কাজই হচ্ছে প্রশ্ন করা। আদালতকে শ্রদ্ধা করলেও এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন বলে জানান কেজরিওয়াল।

জবানবন্দি দিতে রাহুল সর্বশেষ ২০২১ সালে সুরাটের ওই আদালতে যান। সাবেক কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে করা অভিযোগে পুর্নেশ মোদি বলেন, নির্বাচনী জনসভায় করা মন্তব্যে রাহুল মোদিদের পুরো সম্প্রদায়ের মানহানি করেছেন।

রাহুলের আইনজীবীরা মামলাটিকে শুরু থেকেই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে আসছেন। তাঁদের যুক্তি, বিধায়ক পুর্নেশ মোদি নয়, মামলায় অভিযোগকারী হিসেবে থাকা উচিত ছিল নরেন্দ্র মোদির। কেননা রাহুল মন্তব্যটি করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে। তাঁর আইনজীবী কিরিত পানওয়ালা বলেন, রায়ের সময় রাহুল বিচারকদের বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থেই’ তিনি মন্তব্যটি করেছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আদালতের রায় বুঝতে পারছেন না বলে ভারতে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাাটিয়া এক টুইটে বলেন, যদি কেউ বলে যে ‘সব আইনজীবীই চোর’, তাহলে আমি একজন আইনজীবী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারব না– যদি এটা প্রমাণ করতে না পারি যে এটি আমাকে উদ্দেশ করেই বলা হয়েছে।

ভারতের ফৌজদারি মানহানি আইন ব্রিটিশ আমলে প্রণীত, যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে।

আদালতের রায়ের পর রাহুল গান্ধীর পার্লামেন্ট সদস্যপদ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতে শুধু মানহানির কারণে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় না। একজন সংসদ সদস্যকে তাঁর পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় বিরোধিতামূলক প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে। কিন্তু যদি কোনো অপরাধের দায়ে দুই বছর বা তার বেশি দিনের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলেও তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, রায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন একনাথ শিন্ধের শিব সেনা। দলটি বলেছে, ‘জাতীয় আইকন’দের অপমান করার জন্য রাহুলকে জেলে ভরা উচিত।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(218 বার পঠিত)
(195 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]