সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভৈরব সেতু: তিন বছরে অগ্রগতি শুধু ৭টি পিলার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

ভৈরব সেতু: তিন বছরে অগ্রগতি শুধু ৭টি পিলার

খুলনার ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ মাস (৩ বছর) অতিবাহিত হলেও পুরাপুরি নির্মাণ হয়েছে শুধু সাতটি পিলার। ৩৬ মাসে কাজের অগ্রগতি ১২ শতাংশ।

ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অনিয়ম জটিলতার পর বর্তমানে সেতুর ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে পুরোপুরি কাজ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত ডিজাইন পরিবর্তন হয়ে এলেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে সেতুর জায়গা এখনো পুরোপুরি সেতু বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের জিম্মায় আসেনি। দিঘলিয়া অংশে স্থাপনা নিলাম ও ভাঙা হলেও গাছপালা ও মসজিদ এখনো অপসারণ ও স্থানান্তরিত হয়নি।

ভৈরব সেতু বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের (করিম গ্রুপ) ডিপিএম জানান, সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন করে নকশা পাঠানো হয়েছে। নতুন ডিজাইনে ওভার রোড ও মূল ব্রিজের প্রস্থতা বাড়বে। সেতুর দৈর্ঘ্যও বৃদ্ধি পাবে। মূল সেতুসহ সেতুর দুই পারের ওভার রোড ও মূল ব্রিজ চওড়া হবে ১০.২৫ মিটার। যা পূর্বে ছিল ফুটপাত বাদে ৭.৩ মিটার।

পরিবর্তিত ডিজাইনে ফুটপথ যুক্ত থাকবে। মূল ব্রিজের দুই প্রান্তের পিলারের দূরত্ব ১০০ মিটারের পরিবর্তে ১৬০ মিটার করা হবে। অর্থাৎ মূল সেতু ১০০ মিটারের পরিবর্তে ১৬০ মিটার দীর্ঘ হবে। নতুন ডিজাইনে পিলারের কোনো পরিবর্তন হবে না। শুধু অত্যাধুনিক সিমেন্টের সংযোগে পাশে রড ঢালাই দিয়ে সাইড পিলার মোটা ও ক্যাপ সম্প্রসারণ করা হতে পারে। তবে নতুন ডিজাইন ও নকশা না আসা পর্যন্ত কিভাবে পিলার বা ক্যাপ চওড়া করা হবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছেনা। তবে নতুন ডিজাইনের নকশা আগামী সপ্তাহের মধ্যে চলে আসবে। সেতুর সাইডে জনবল এলেই খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ২০২১ সালের ২৪ মে সরকারি খাস জমির ওপর সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলার নির্মাণকাজের মধ্য দিয়ে খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ৬টি এবং শহরাংশে নদীর তীর সংলগ্ন ১টি পিলার নির্মাণ হয়েছে। যদিও ডিমেতালে ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া অংশের ফুল পিলারের বাকি আটটি পিলারের কাজও চলছে।

এদিকে দিঘলিয়া কুকুর মারা মোড় থেকে উপজেলা মোড় পর্যন্ত সেতুর স্লোপের শুরুতে এপার্টমেন্টসহ পিলার বসবে যার এখনো ছায়া মেলেনি। বর্তমানে সেতুর নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস।

এদিকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে ধীর গতি শুরু থেকে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যেন কাটছে না। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে কাজ চলমান থাকলেও শহরাংশ পশ্চিমাংশ রেলিগেট থেকে দৌলতপুর মুহসিন মোড় পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ থমকে আছে। এ প্রান্তে সেতু নির্মাণ কাজের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা অধিগ্রহণ হলেও অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে কোনো স্থাপনা অপসারণ করা হয়নি। জায়গা বুঝে দেওয়া হয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। রেলওয়ের জমিও অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও অনেক পিছনে। সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়ে-চড়ে বসেন। কাজের কাজ হচ্ছে না কেন তা বোধগম্য নয় কারো।

যে কারণে দ্বিতীয় দফা মেয়াদে সময় বাড়ানোর পরও ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যেও শেষ হচ্ছে না। এরই মধ্যে তৃতীয় দফায় আরো ২ বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। খুলনাবাসীর জিজ্ঞাসা কবে নাগাদ শেষ হবে ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ?

সরেজমিনে সেতুর উভয় প্রান্ত ঘুরে দেখা যায় দিঘলিয়া প্রান্তে কাজ চলমান থাকলেও বিগত কয়েক মাস কাজ বন্ধ রয়েছে।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, অর্থের কোনো সংকট নেই। রেলওয়ের জায়গার সমস্যার সমাধান শেষ দিকে। তবুও কেন বাস্তবায়ন কাজে গতি আনতে পারছেননা ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ?

সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হাসান জানান, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৩৪ টি পাইল রয়েছে যার সবগুলো পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রান্তে ১৩টি পিলারের মধ্যে এরই মধ্যে ৭ টি’র কলাম ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ টি পিলারের মধ্যে ৯ টি’র পাইল ক্যাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪ টি’র কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে।

এ প্রান্তে সেতুর কাজের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ। সেতুর শহরাংশে জায়গা বুঝে না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। কাজে লাগাতে পারছি না পাইলিং মেশিন। তিনি বলেন, খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে খুবই তাড়াতাড়ি সেতুর শহরাংশের অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে পরিবর্তিত নকশাও চলে আসবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেতুর উভয় প্রান্তে পিলার নির্মাণ ও নির্মিত পিলারের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। আর সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ। নির্মাণকাজের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে ২ বছরের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেতুর নির্মাণকাজে ধীর গতির জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়ানোর জন্য তাদেরকে সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজ’র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লি. (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির ওপর ২৪ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিম পাশে অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নম্বর পিলার বসবে। এ অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাক্সক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। ৫ এবং ৬ নম্বর পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭ এবং ৮ নম্বর পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নম্বর এই ৫টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেডের অভ্যন্তরে।

১৭ থেকে ২৮ নম্বর পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগর ঘাট এবং বানিয়াঘাট ফেরিঘাট সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কাছে কুকুরমারা পর্যন্ত। পরবর্তিত ডিজাইন ও নকশা অনুযায়ী পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে ১৫ নম্বর পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড়ে ১৬ নম্বর পিলার বসবে। এ ছাড়া নদীর উভয় দিকে যেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে এ-১ এবং এ-২ দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোনো পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নম্বর পিলারের ওপর ১৬০মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর ওপর মূল সেতুটি।

নেভিগেশনের জন্য নদী দিয়ে যাতে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল সেতুর স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে। কুকুরমারা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৩ ফুট চওড়া অ্যাপ্রোচ রোড হবে। এ ছাড়া খুলনা যশোর রোড থেকে সেতুতে ওঠার জন্য নগরীর মহসিন মোড়ে একটি ইন্টারসেকশন বা (জংশন) তৈরি করা হবে।

ভৈরব সেতু প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া-গাজিরহাট তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]