নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
ইব্রাহিম আলী সবার কাছে সর্পরাজ ইব্রাহিম হিসেবে পরিচিত। বিষাক্ত সাপদের ভালোবেসে সঙ্গী করে তিনি পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৩০টি বছর। সাপ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখনও সাপের সন্ধানে ছুটে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সেই সঙ্গে লতা-পাতা দিয়ে নিজের তৈরি রোগ নিরাময়কারী ভেষজ দিয়ে মানুষের উপকার করে আসছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউপির সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিমের জন্ম ভারতের আসাম রাজ্যে হজাই এলাকায়। তার বাবা তাহের আলীও ছিলেন একজন ওঝা ও কবিরাজ। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে গূণমন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন তিনি। পরে ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ কামাখ্যায় (পানামং মায়ারাজ্য) সর্প বিদ্যা ও তন্ত্র-মন্ত্রে একাধারে ১৮ বছর প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
তার গুরু আসামের সামলাল গারওয়ালি নেংটা নাগার কাছ থেকে গূণমন্ত্র শিখেন ইব্রাহিম। এরপর থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে দিয়ে যান মানুষকে সেবা। যেখানেই বিষাক্ত সাপের দেখা পাওয়া যেতো সেখানেই ডাক পড়তো ইব্রাহিম আলীর।
তিনি দাবি করেন, যেকোনো সাপ কোনো রকমের লাঠি বা কোনো কিছুর সহায়তা ছাড়াই তিনি ধরে ফেলতে পারেন। ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থানের পর চলে আসেন বাংলাদেশে। সিলেটের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাপ ধরতে থাকেন তিনি। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বর্তমানে সুনামগঞ্জে চলে এসেছেন তিনি। এবার তার টার্গেট সুনামগঞ্জ। এর আগেও ছাতকে জগন্নাথপুর উপজেলায় সাপ ধরেছেন।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পরফুল্য মহন্তও তার কাজের প্রশংসা করেছেন, দিয়েছিলেন প্রশংসাপত্রও। তিনি সেখানে লিখেছিলেন, সর্পরাজ ইব্রাহিম আলী একজন সৎ এবং কর্তব্যপরায়ন লোক।
ইব্রাহিম আলী এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিষধর সাপ কিং কোবরা, ব্ল্যাক কোবরা, পংকি আলদ, সূর্যমুখী, মাছুয়া আলদ, গাছুয়া আলদ, দুধরাজ, কেরেট আলদ, গ্রিন ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ধরে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। যে কোনো প্রজাতির সাপ নিজের বশে আনতে ইব্রাহিম পারদর্শী।
ইব্রাহিমের শিষ্য নাহিদুল আহমেদ বলেন, তিনি আমার গুরু, তার কাছ থেকে সর্পবিদ্যা শিখে যাচ্ছি। গূণমন্ত্রের মধ্য থেকে মানুষের বিভিন্ন রোগ সারিয়ে দেন তিনি। মানসিক অশান্তি, পারিবারিক অশান্তির সমাধানও করতে পারেন, যার জন্য তিনি কোনো পারশ্রমিক নেন না।
সর্পরাজ ইব্রাহিম আলী বলেন, সাপকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাপ কারো ক্ষতি করে না। ওরা আমাদের বন্ধু। তাই সাপ অনেক সময় মানুষের বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে। ভয়ে অনেকেই বাড়ির বাইরে থাকেন। কেউ আবার মেরে ফেলেন। এসব করবেন না। আমাদের খবর দিন, আমরা বিনামূল্যে সাপ ধরে দেব তবুও তাদের ক্ষতি করবেন না।
তিনি বলেন, এ পেশায় ৩০ বছর হয়ে গেছে। নিজের বয়স এখন ৬০ চলে, যৌবনের ১৮ বছর চলে গেল শিক্ষায়। তবে এ পেশায় আসার পর অনেক কথা শুনেছি মানুষের, তবে আমি হেরে যায়নি, বর্তমানে আল্লাহর রহমতে অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন। এখন সুনামগঞ্জে এসেছি বাড়ি করেছি এবং এখানেই অবস্থান করছি। কারো প্রয়োজন হলে আমাকে অবশ্যই পাবেন। আমি আপনাদের সবার সেবা দিতেই এসেছি।
Posted ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin