নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
পাকিস্তান জ্বলছে। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর ক্ষোভ ও সহিংসতার সূত্রপাত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে প্রবেশ করে এবং একজন কর্মরত কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে হামলা চালায়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভ্যুত্থান আগে কখনও ঘটেনি, যদিও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বেশ কয়েকজন নেতাকে জেনারেলরা ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন।
রাস্তার এ ক্ষোভ কি আসন্ন ঘটনাপ্রবাহের আভাস? পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা কি একটি নজির স্থাপন করেছে? নেতাকর্মীরা কি সেনাবাহিনীকে বলছে– তারা চিরকাল দেশে রাজনৈতিক গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না?
এই যুদ্ধ অন্য পরিণতিও বয়ে আনতে পারে। জেনারেলরা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে পারেন এই যুক্তি দেখিয়ে– পাকিস্তান ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি। তাই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বরদাশত করা সম্ভব নয়। জেনারেলরা বলতে পারেন, আমরা দেশকে বাঁচাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হস্তক্ষেপ করছি। কিন্তু নতুন সেনাপ্রধান অসীম মুনির সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তেমনটা নাও ঘটতে পারে। পাকিস্তান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
তবে তা বিবেচনা করে সেনাবাহিনী তার সুনামকে আর নষ্ট করতে চাইবে না। বরং নির্বাচিত সরকারের আড়াল থেকে লাগাম টেনে আনা অনেক সহজ। মুনিরের পূর্বসূরি জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছিলেন, সেনাবাহিনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে।
তবে পাকিস্তান এই মুহূর্তে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন। ফলে দেশটিতে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে সেনাবাহিনীই একমাত্র শক্তি, যারা সত্যিই কাজ করে। কাজেই এমন একমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এই সংকটে নীরব থাকা সহজ হবে না।
মনে করা হয়, ইমরানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই কারণ যে, তিনি সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্রমাগত কথা বলে আসছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে তাদের সুনাম নষ্ট করেছিলেন।
গত নভেম্বরে ইমরানের প্রাণহানির চেষ্টার পর তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন পাকিস্তানের শক্তিশালী গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এর পেছনে ছিল। মঙ্গলবার পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় ইমরান জানান, এজন্য দায়ী আইএসআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির।
এরপর সেনাবাহিনী আর বসে থাকতে পারেনি। ইমরানকে সমালোচনা অব্যাহত রাখার সুযোগ দিতে চাননি জেনারেলরা। তাই অন্য একটি মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জামিনের জন্য গেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে তাঁর মুখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিচার বিভাগের বেশিরভাগই ইমরানের সঙ্গে। কিন্তু এখন সেনাবাহিনী হাত দেখালে বিচার বিভাগের পিছু হটতে বেশি দিন লাগবে না। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা এটি করেছে।
ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আল-কাদির মামলায়। মামলাটি বেশ পুরোনো। তিনি এতদিন সেনাবাহিনীর গুডবুকে ছিলেন বলে কেউ এ নিয়ে কথা বলেননি। সেনাবাহিনীর জন্য জুতসই হওয়ায় এবার মামলাটি গতি পেয়েছে। কারণ মামলাটির শক্ত ভিত্তি আছে।
পাকিস্তানে কোনো নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। সেনাবাহিনীর জন্য অসুবিধাজনক হওয়ায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলি ভুট্টো, তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো, বেনজিরের স্বামী আসিফ আলি জারদারি থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, তাঁর ভাই নওয়াজ শরিফসহ অনেককে বিভিন্ন সময়ে কারাবন্দি করা হয়েছে। এমনকি ইমরান খানও ছিলেন জেনারেলদের নয়নের মণি। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন জেনারেলদের আশীর্বাদে।
ইমরান খান তাঁর ক্রিকেটপ্রতিভার জন্য বেশিরভাগ পাকিস্তানির কাছে একজন নায়ক। তিনি সেই শক্তিকে তাঁর দলের শক্ত ভিত্তিতে রূপান্তরে সক্ষম হন। তাঁর বেশিরভাগ সমর্থক এখন পাকিস্তানজুড়ে সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং তারা তাদের নেতার জন্য মরতেও প্রস্তুত। এই ধরনের উন্মত্ত সমর্থন সম্ভবত ইমরানকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাহস জুগিয়েছে। তিনি মনে করেন, রাস্তার শক্তি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারে।
বর্তমান সংকট পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে সেনাবাহিনীর আধিপত্যে লাগাম দিতে সাহায্য করলে সেটিই হবে দেশকে ইমরান খানের সবচেয়ে বড় সেবা।
সূত্র : ভারতের আউটলুক
Posted ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin