বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দয়াল কুমার বড়ুয়া

পরিকল্পিত পরিকল্পনায় বিগত ১৪ বছরে বদলে যাওয়া দেশের অবকাঠামো

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

পরিকল্পিত পরিকল্পনায় বিগত ১৪ বছরে বদলে যাওয়া দেশের অবকাঠামো

বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশকে দ্রুততম সময়ে উন্নয়নশীল এবং ক্রমাগত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত করার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে বিগত ১৪ বছরে বদলে যাওয়া দেশের অবকাঠামো।

বিগত ১৪ বছরে বহু প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, মিরপুর-কালশী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

একইদিনে ১০০ সেতু ও ১০০ সড়ক উদ্বোধন

প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামি বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়ে। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন।

২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

অর্থনীতির লাইফলাইন বলা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে। ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও দফায় দফায় সময় বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় চীনা কম্পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের কাজ শেষ করে। যার ফলে মানুষ এখন কম সময়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে পারছে। আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে কষ্ট পোহাতে হতো যাত্রীদের। শেষ পর্যন্ত জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মিত হয়েছে এই সরকারের সময়ে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বুলেট ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্নও বর্তমান সরকারই দেখাচ্ছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে ঢাকা-মাওয়া চার লেনের সড়কটিও শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক পাল্টে দিয়েছে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি, পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু, ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেন্ট, ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, সাসেক সংযোগ সড়ক-২, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ও ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবনধারা।

অদম্য সাহসিকতার পদ্মা সেতু

সরকারের টানা ১৪ বছরে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলা যেতে পারে পদ্মা সেতু। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাস্তবায়ন হয় ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। এরপর মাঝের কয়েক বছর দেশের ক্ষমতায় না থাকার কারণে এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ঝুলে যায়। ২০০৮ সালে দেশের ক্ষমতায় আসার পর আবার এই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ব্যয়ে নির্মিত হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করে এই সেতু। নির্মাণ ও আধুনিকতায় এই সেতু বিশ্বে অন্যতম মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ

বাংলাদেশে একদিন মানুষ আকাশ পথে রেলে চলাচল করবে, দীর্ঘদিনের চলার পথে যানজটমুক্ত জীবন উপভোগ করবে- এটা ছিল বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। এর প্রভাব জনজীবনে এরই মধ্যে দৃশ্যমান। মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী কিছুটা স্বস্তি পাবে। ইতিমধ্যে মেট্রোরেলে তিনটি রুটের মধ্যে একটি রুটের সংক্ষেপিত পথের অর্থাৎ যেটা উত্তরা থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিলের দিকে যাবে তার একটি অংশ আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন হয়ে গেছে। গত হওয়া বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই পথে মেট্রোরেলে চড়ে উদ্বোধন করেছেন। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাকি রুটের রেলপথ সবার জন্য উম্মুক্ত হবে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দেওয়া তথ্যানুসারে, কর্মঘণ্টা কাজে লাগিয়ে ও যানবাহন পরিচালনার ব্যয় কমিয়ে প্রতিবছর মেট্রোরেল থেকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে। এই পথে মেট্রোরেল পথ নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এই মেট্রোরেল বিগত ১৪ বছরের সক্ষমতার চিহ্ন হিসেবে বহন করছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল

খুব শিগগিরই উদ্বোধন হবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর টানেল। এই টানেল চালু হওয়ার পর কক্সবাজারের সঙ্গে সড়কে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। ৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এটি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই নয় পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

রূপকল্প-২০৪১ ও বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০

রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে টিকিয়ে রাখা। এ পরিকল্পনাকে সামনে রাখলে অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে দেশের পরিবর্তিত অবকাঠামো নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার এসকল পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে।

দয়াল কুমার বড়ুয়া।
সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী,
ঢাকা ১৮ আসন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]