শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চমকপ্রদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ, ব্যবসাই যার শেষ কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

চমকপ্রদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ, ব্যবসাই যার শেষ কথা

দেশটি ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারপরও শুধু ইউরোপভূক্ত হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ খোঁজেন সেখানে। বলছি ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাসের কথা।

সাইপ্রাসের তুরস্ক স্বীকৃত অংশের নাম উত্তর সাইপ্রাস বা নর্দান সাইপ্রাস। এই অঞ্চলে আসা বিদেশি পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষা ব্যবসা রীতিমতো অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে। স্বঘোষিত রাষ্ট্রটির ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় সাশ্রয়ী মূল্যের কোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। ভুল তথ্যে আসা এসব ভুক্তভোগীদের একসময় মোহভঙ্গ হয়।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৪ সাল থেকে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে আছে টার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দান সাইপ্রাস। এ অঞ্চলে বসবাসরতরা সবাই তুর্কি ভাষাভাষী। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রিপাবলিক বফ সাইপ্রাসে বাস করেন গ্রিক ভাষাভাষী সাত লাখ নাগরিক।

সাইপ্রাসের দুই অংশের এই জটিল সমীকরণ বুঝতে পারেন না এশিয়া, আফ্রিকা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। নর্দান সাইপ্রাসে ছাত্র ভিসায় এসে হতাশ হয়ে পরবর্তীতে ইউরোপীয় সাইপ্রাসে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় করে হতাশায় নিমজ্জিত হন অসংখ্য অভিবাসীরা।

নর্দান সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়া থেকে ফামাগুস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে হাজারো বিশ্ববিদ্যালয়। বড় ক্যাম্পাসগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ছোটো বিল্ডিংগুলোর ফ্ল্যাটে ও বাসা বাড়িতে স্থাপিত হয়েছে সাইপ্রাস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান লিডারশিপ বিশ্ববিদ্যালয়, ফাইনাল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।

আকর্ষণীয় ইংরেজি নামের এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেআইনি উচ্চশিক্ষা ব্যবসায় জড়িত। আফ্রিকার কিনশাসা থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ইসলামাবাদের মতো দূরদূরান্ত জায়গা থেকে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর করতে এসে ফাঁদে পড়ছেন হাজারো শিক্ষার্থী।

দেশটিতে বছরে আসা প্রায় ৫০ হাজার বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধানত আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য বা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

উত্তর সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষের মতে, দেশটির জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসছে বিদেশি উচ্চশিক্ষা খাত থেকে।

পর্যটনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দাঁড়িয়েছে এই খাতটি। বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। তারা প্রায়শই প্রাক্তন ছাত্রদের কমিশন ভিত্তিক এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এক্ষেত্রে তারা এজেন্টদের প্রতি নতুন শিক্ষার্থীর জন্য ৮০০ ডলার পর্যন্ত কমিশন প্রদান করে। বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই কমিশন প্রথা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এজেন্টরা তাদের প্রতিশ্রুতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। যেগুলোর বেশিরভাগই মিথ্যা। এসব ব্যক্তিরা কমিশনের অর্থের জন্য তাদের দেশের নতুন ছাত্রদের নর্দান সাইপ্রাসে আসার পরে চাকরি, বাসা, বৃত্তি এবং দেশটির জীবনযাত্রা সাশ্রয়ীসহ নানা তথ্যের ফাঁদে ফেলেন। কিন্তু একজন ছাত্র নর্দান সাইপ্রাসে আসার পর দেখতে পান তার এখানে খুব সীমিত সুযোগ রয়েছে।

এজেন্টদের ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে সক্রিয় সুদানের ছাত্র এবং ভয়েস অব ইন্টারন্যাশনালের সদস্য মাগাজি আহমেদ, এখানে যারা আসে তারা বাস্তব পরিস্থতি দেখে হতবাক হয়ে যায়। আমার এমন বন্ধুরাও আছে যারা ভেবেছিল যে তারা এখান থেকে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে সহজে প্রবেশ করতে পারবে।

মাগাজি আহমেদ তার সংস্থার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালগুলো এবং কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। যাতে করে নর্দান সাইপ্রাসের এজেন্ট ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইমানুয়েল আচিরি ব্যাখ্যা করেন, অনেক বিদেশি ছাত্ররা ভূখণ্ডে প্রবেশের সুযোগ পান না। আমাদের দুইজন পর্যবেক্ষকের মতো অনেক ছাত্রকে উত্তর সাইপ্রাসের ইমিগ্রেশন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে আসা কোনো ছাত্রদের কাছে দক্ষিণ সাইপ্রাসের একটি সাধারণ টেলিফোন নম্বর পাওয়া যাওয়ার অজুহাতেও ইমিগ্রেশন থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

ছাত্ররা অসহায়, বহিষ্কৃত, কারারুদ্ধ

এজেন্টদের প্রতিশ্রুতির পরিণতি অনেকক্ষেত্রে বেশ গুরুতর হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিতে পড়ে যান। তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ক্লাস করা ছেড়ে দেয়।

নর্দান সাইপ্রাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার ইউরো মধ্যে টিউশন ফি নিয়ে থাকে। যা -ইউরোপীয় ও আমেরিকান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম।

তবে শিক্ষার্থীরা প্রায়শই শুধুমাত্র তাদের প্রথম সেমিস্টারের জন্য অর্থ প্রদান করে সেখানে যান। বাকি কোর্সের অর্থায়নের জন্য তাদেরকে একটি চাকরির সন্ধান করতে হয়। কিন্তু নর্দান সাইপ্রাসের অর্থনৈতিক অবস্থা দক্ষিণ সাইপ্রাসের মতো নয়। সঠিক সময়ে টিউশন ফি প্রদান করতে না পারলে এক সময় ভিসার মেয়াদ চলে যায়।

অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা ভিসার মেয়াদ চলে গিয়ে অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে গিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদেরকে সেখান থেকে নিজ দেশ ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ব্যর্থ হওয়াদের কেউ কেউ নর্দান সাইপ্রাসের আসার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় নিজ দেশে ফিরে যান। অপরদিকে, বড় একটি অংশ দক্ষিণ সাইপ্রাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ। নিকোসিয়ার মধ্যবর্তী সবুজ লাইন দুই অংশকে আলাদা করেছে। যেখানে নিয়মিত বেআইনি পারাপার সংগঠিত হয়।

দক্ষিণ সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২২ সালে ১৯ হাজারেরও বেশি লোক এটি অতিক্রম করেছে। যাদের বেশিরভাগেরই উত্তর অংশের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা। তারা ইউরোপে আশ্রয় নেওয়া বা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন।

দক্ষিণ সাইপ্রাসের পৌঁছানোর পর আশ্রয়প্রার্থীদের দ্বীপের পৌরনারা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে জীবনযাত্রার অবস্থা বেশ জটিল।

উত্তর সাইপ্রাসে ব্যর্থ হয়ে সাইপ্রাসের ইউরোপীয় অংশে এসেও তাদের প্রায়শই হতাশ হতে হয়। কারণ এখানে আশ্রয়প্রার্থী থেকে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার হার খুবই কম।

২০২২ সালে মাত্র ৩৩১ জন ব্যক্তি এই দ্বীপরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছে। অর্থাৎ বেশিরভাগ আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখাত হয়েছে।

ইনফোমাইগ্রেন্টসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দায়ের হওয়া প্রায় ৭০ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থীকে দক্ষিণ সাইপ্রাস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া দেশটিতে আশ্রয় আবেদন এর প্রক্রিয়াকরণের সময় অনেক দীর্ঘ। কিছু ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুর্দশার মধ্যে বাস করতে হয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(221 বার পঠিত)
(201 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]