শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি   |   সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করেছে দেশের রাজধানী। শনিবার সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ঘোষণার পাশাপাশি প্রথম যাত্রী হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে ভ্রমণ করেন। প্রথম টোলদাতা হিসেবেও স্মরণীয় করে রাখেন নিজেকে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্ধেকের বেশি অংশ শনিবার খুলে দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। খুলে দেওয়া সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র ১০ মিনিটেই। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপেসওয়ের বিমানবন্দর-বনানী-তেজগাঁও সাধারণের যান চলাচল শুরু হয়েছে রবিবার ভোর ৬টা থেকে। নির্ধারিত টোল দিয়ে ব্যবহার করা যাবে এ উড়ালপথ। এতে যানজট থেকে রাজধানীবাসীর স্বস্তি মিলবে। প্রকল্পের পুরো অংশ কুতুবখালী পর্যন্ত চালু হবে আগামী বছরের জুনে। এর ফলে দেশের যোগাযোগ খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন অনুভূত হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব তথা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বদৌলতে রাজধানীর যানজট একদিকে যেমন কমবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২০ কিলোমিটারের সড়ক ২০ মিনিটে পার হওয়ার সুযোগ মিলবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের এ প্রকল্পটি দেশের উন্নয়নের একটি অনুকরণীয় মডেল বলেও বিবেচিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ঢাকা মহানগরীর যানজট বহুলাংশেই কমাতে সক্ষম হবে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালপথের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার হলেও এই উড়ালপথে ওঠানামার জন্য যে মোট ৩১টি র‌্যাম্প বা পথ রয়েছে, সেগুলোসহ মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এর ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের যানবাহনগুলো মহানগরের মধ্যে থাকা বর্তমান সড়কগুলো ব্যবহার না করেই উত্তরায় নেমে পশ্চিমাঞ্চলে বা উত্তরাঞ্চলে যেতে পারবে। একইভাবে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনসহ সাভার ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চলের মালপত্র নিয়ে যানবাহনগুলো দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যেতে পারবে।
এতে যেমন যাতায়াতের সময় কমবে, তেমনি কমে আসবে বিপুল জ্বালানি খরচ। শ্রমঘণ্টার হিসাবেও বিপুল পরিমাণ অর্থমূল্যের সাশ্রয় হবে। এর দ্বিতীয় ধাপে থাকছে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালপথ, দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। এই দুই উড়ালপথের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হলে সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর হয়ে বিমানবন্দর, কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত এক রেখায় যুক্ত হবে। এ পথের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এবং র‌্যাম্পসহ পুরো পথের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এটি আরেকটি বিপ্লব হিসেবেই চিহ্নিত হবে। শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ-জ্বালানির পাশাপাশি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক মনোনিবেশ করে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, বিদ্যমান মহাসড়কগুলো চার লেন করা, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি, ঢাকা মহানগরীতে মেট্রো রেলসহ আরো অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রো রেলের আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বা শুরু হবে শিগগিরই। বিদ্যমান দুটি বন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল ও কক্সবাজারে আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ আরো অনেক কার্যক্রম এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ফলে শুধু ঢাকা মহানগর নয়, সারা দেশেই যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। দেশের রাজধানীর পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকে। শহরটিকে হতে হয় আধুনিকতা ও নান্দনিকতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। নাগরিক সুবিধা থাকে সুবিস্তৃত ও বহুমুখী। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও হতে হয় সুগম ও বহুমাত্রিক। আবার শহর থেকে শহরের উপকণ্ঠ ও শহরতলিতে নিত্য যাতায়াতেরও সুবিধা থাকতে হবে। এ সবের জন্য চাই সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা। স্বাধীনতার অর্ধশতকে এমন যোগ্য পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রকৃত অর্থে মিলেছে বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে। ফলে রাজধানী ঢাকার রূপবদল ঘটেছে। যেমন হয়েছে একের পর এক উড়াল সড়ক, হয়েছে যুগান্তকারী মেট্রোরেল। সামনেই উদ্বোধন হতে চলেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মেট্রোরেল আরও একটি বিস্ময়-জাগানো মাইলফলক অর্জন। রাষ্ট্রচিন্তায় যদি থাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণ, তার প্রতিফলন দেখা যায় সরকারের নীতি ও পরিকল্পনায়। এসব নীতি-পরিকল্পনার আলোকেই গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো। রাজধানীবাসীর কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল পুরোদস্তুর চালু হলে ঢাকা মহানগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ অগ্রগতি হবে। রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর। রাজধানীর অসহনীয় যানজটে কেবল জনদুর্ভোগই বাড়ছে না, দেশও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। হাতিরঝিল বৃত্তাকার সড়ক হওয়ায় যানজট পরিস্থিতি অবশ্য অনেকটা সহনীয় হয়েছে।
ঢাকায় একেকটা উড়াল সড়ক হয়েছে আর ঢাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হচ্ছে, সময়ও বাঁচছে। মিরপুর, মিরপুর ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, বনানী, উত্তরা ও ঢাকা বিমানবন্দরে যাতায়াতের সুবিধার্থে কালশী উড়াল সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে ক’মাস আগে। ক’বছরের মধ্যে মিরপুর আগের চেয়ে অনেক পাল্টেছে। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, হয়েছে উড়াল সড়ক। যাতায়াত এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। অথচ একসময় মিরপুরের এই বাউনিয়াবাঁধ, কালশী, মানিকদী, মাটিকাটা এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বিচ্ছিন্ন।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যোগাযোগ অবকাঠামোর পরিকল্পিত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, উন্নয়নের এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]