নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
নারী চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিককে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে করা মামলার আসামি কথিত স্বামী রেজাউল করিম রেজার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত এই দিন ধার্য করেন। আদালতের কলাবাগান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর সাফায়েত এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন এ দিন ধার্য করেন।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম থেকে রেজাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ১৩ আগস্ট তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলমের আদালতে আসামি রেজাউল করিম রেজা জবানবন্দি দেন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জবানবন্দিতে রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে তিনি জান্নাতকে খুনের পরিকল্পনা করে আসছিলেন এবং সুযোগ খুঁজছিলেন। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট জন্মদিন পালনের কথা বলে জান্নাতকে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। জান্নাতকে খুনের জন্য ব্যাগে করে একটি ছুরি নিয়ে যান তিনি।
জবানবন্দিতে রেজাউল আরো জানান, জান্নাতের সঙ্গে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় তার। ২০২০ সালের অক্টোবরে উভয়ের পরিবারকে না জানিয়ে তারা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। এই বিয়ে জান্নাতের পরিবার মেনে নেয়নি। আবার রেজাউলের সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক আছে বলে জানতে পারেন জান্নাত। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। জান্নাত রেজাউলকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বোঝাতে থাকেন। সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন জান্নাত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতেন তারা। কিন্তু রেজাউল জান্নাতের কথামতো সঠিক পথে না আসায় তার জীবনের বাধা দূর করতে জান্নাতকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন সকালে হোটেলে ওঠেন তারা। সেখানে অন্য নারীর সঙ্গে রেজাউলের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একসময় রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে ডা. জান্নাতের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন। পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি। এরপর গোসল করে গায়ের রক্ত ধুয়ে ফেলেন। তারপর জান্নাতের মোবাইল নিয়ে বাইরে থেকে ঐ কক্ষে তালা দিয়ে চলে যান।
রেজাউল স্বীকারোক্তিতে আরো বলেন, হোটেল থেকে বেরিয়ে তিনি মালিবাগে তার বাসায় যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একটি হাসপাতালে যান। ধস্তাধস্তিতে তার হাত কেটে গিয়েছিল, সেখানে সেলাই করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে বাসে করে চট্টগ্রামে চলে যান। চট্টগ্রামে গিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, খুনের দিন ২০২২ সালের ১০ আগস্ট রাত সাড়ে নয়টার দিকে জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, গ্রেফতার রেজাউল কক্সবাজারের নবী হোসাইনের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন। এমবিএ চলাকালে তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে কিছুদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকেও চাকরি করেন। সবশেষ গত জুনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।
Posted ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin