মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণখেলাপিদের ধরতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

ঋণখেলাপিদের ধরতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে

দুর্বল ব্যাংক সংস্কারের বড় উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ভবিষ্যতে সবল কোনো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে। খেলাপিদের ধরতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভায় এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকার্স সভায় দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার, ডলারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, মামলায় আটকে থাকা অর্থ আদায়ে পদক্ষেপ ও ব্যাংক খাত সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়।

একই সঙ্গে প্রমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সভার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর সংস্কারের জন্য প্রমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ঘোষণা করা হয়। সেখানে সংস্কারের ক্ষেত্রে কিভাবে ব্যাংকগুলোর অবস্থান নির্ণয় করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া আছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকের হিসাব ধরে আগামী বছরের মার্চ নাগাদ ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হবে।

এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। আর যেসব ব্যাংকের অবস্থা একেবারেই দুর্বল তাদের ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। আবার কোনো কোনো ব্যাংকের একীভূত (মার্জার) করেও দেওয়া হতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো যদি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে তাহলে তো কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা আসবে না।

মেজবাউল হক বলেন, আমরা সম্প্রতি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছি। সেখানে আমরা বলেছি আমাদের টার্গেট বাস্তবায়ন পর্যন্ত এই ধরনের মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। এ জন্য তাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যেন তারা তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের সুশাসন ফেরাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে।

মুখপাত্র বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সময় ক্রলিং পেগ চালুর বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সুদের হার আরো বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

সভা শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতি ও দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, সভায় জানানো হয় দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করে উন্নতি করা হবে। গভর্নরের ক্ষমতা আছে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। এসব পদক্ষেপে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব কাজে আসবে না। এখন মূল কাজ ব্যাংক খাত সংস্কার করা। এ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়টি জানানো হয়েছে, যেন সংস্কারের বিষয়ে সবাই প্রস্তুত থাকেন। সুদহার বাড়ছে, এটা যেন হঠাত্ অনেক বেশি বেড়ে না যায় সে জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এখন যে সুদহার আছে সেখানেই সবাইকে থাকতে বলা হয়েছে। বাড়লেও যেন আস্তে আস্তে বাড়ে। বাজারে প্রভাব যেন না পড়ে।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সংবাদমাধ্যমে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া কাঠামো অনুযায়ী ব্যাংকিং পরিচালনা হবে। খেলাপিদের ধরতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। এ ছাড়া ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার সব কিছুই নিতে গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো এরই মধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আমাদের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ডলার সংকট অনেকটাই কেটে এসেছে। তবে এখনো ডলারের কিছুটা সংকট রয়েছে, যা দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে যাবে। আর ডলার সংকটের কারণে রমজানের পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]