মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্চেই আন্তর্জাতিক দরপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্চেই আন্তর্জাতিক দরপত্র

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। প্রতিযোগীতায় যারা যোগ্য হবে, তারাই কাজ পাবে। পেট্রোবাংলা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করে বলেন, আমরা মার্চেই দরপত্র আহ্বান করতে চাই।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চায় সরকার। সর্বাধিক কোম্পানি যাতে দরপত্রে অংশ নেয়, সেজন্য বিভিন্ন দেশে রোড শো করা হবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের অনুমোদন দিয়েছেন।

জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের পর কোম্পানিগুলোকে বিড ডকুমেন্ট জমা দিতে ছয় মাস সময় দেওয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে পিএসসি চূড়ান্ত করতে চাই। তবে এর আগে বিভিন্ন দেশে রোড শো করা হবে। আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদের যোগ্য মনে হবে, তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগের পিএসসিতে (পিএসসি-২০১৯) সুযোগ-সুবিধা কম থাকার কারণে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে শুরুতে আগ্রহ দেখালেও পরে তারা আর কাজ করেনি। ২০১১ সালের ১৬ জুন সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পেট্রোবাংলা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি করে। ব্লক দুটিতে দ্বিমাত্রিক জরিপ শেষে ২০১৪ সালে তারা জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলে কাজ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা কাজ না করেই চলে যায়।

২০২০ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে কনোকো ফিলিপস, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, এক্সজোনমোবিল ইন্টারন্যাশনালের মতো কোম্পানি অংশ নিয়েছিল। সে সময়ও তাদের কাছে যে পিএসসি উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেটি পিএসসি-২০১৯-এর সংশোধনী। তখন কোম্পানিগুলো এই পিএসসি সংশোধন করে আরও আকর্ষণীয় করার পরামর্শ দিয়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান পিএসসি-২০১৯ সংশোধন করে আরও আর্কষণীয় করা হয়। গত বছরের ২৬ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয় সংশোধিত পিএসসি-২০২৩। এরপর গত বছর দরপত্র ডাকার প্রস্তুতি নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তা পিছিয়ে যায়।

জানা গেছে, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তুলতে পিএসপি-২০২৩ বেশ আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করে দেওয়া হলেও এবার তা হয়নি। বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রডের (জ্বালানি তেল) বাজারদরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ও ৭.২৫ ডলার স্থির ছিল। পিএসসি-২০০৮ গ্যাসের দাম ছিল ৪ দশমিক ২ ডলার। পরে পিএসসি-২০১২-তে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৬ ডলার।

এছাড়া নতুন পিএসসিতে উৎপাদিত গ্যাসের ভাগাভাগিতেও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। চলমান পিএসসিতে গ্যাস উৎপাদনের শুরুতে পেট্রোবাংলা এবং আইওসির গ্যাসের ভাগাভাগির মধ্যে ১০ ভাগ পার্থক্য থাকে। উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোবাংলা ৮০ ভাগ এবং আইওসি ২০ ভাগ গ্যাস পেয়ে থাকে। পিএসসির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির পরামর্শ অনুযায়ী এতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন পিএসসিতে উভয় পক্ষ সমান শতাংশে ভাগ পাবে।

গ্যাসের ভাগাভাগিতে আগের মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী আইওসি ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করলে পেট্রোবাংলার ৫৫ শতাংশ, আইওসির ছিল ৪৫ শতাংশ। এভাবে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনে পেট্রোবাংলা ৬০ শতাংশ ও আইওসি ৪০ শতাংশ, ২৫০ মিলিয়নের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা ৬৫ শতাংশ আইওসি ৩৫ শতাংশ গ্যাস পেত। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হলে পেট্রোবাংলা ৮০ শতাংশ এবং আইওসি ২০ শতাংশ গ্যাস পেত।

তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন যোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে। পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]