নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
বাজারে ক্রেতাদের কেনা মাছ কেটে-ধুয়ে ঝিনাইদহের চলছে অনেক ছিন্নমূল নারীর সংসার। রোজায় গৃহস্থালীর কাজ সহজ করতে মাছের বাজারের এমন আয়োজনে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। তৈরি হয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ছোট বড় মাছ কেটে উপার্জন করছেন অনেকেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক নারী ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করছেন।
ঝিনাইদহ জেলা শহরের ওয়াবদা মোড় ও হাটের রাস্তায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে মাছ কাটা-ধোয়ার কাজ চলে। আর রমজানে এভাবে মাছ কাটার চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ ।
পছন্দের মাছ কেনার পর সেটি বাসায় কাটা ও ময়লা ফেলার সংকট দূর করতে ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এমন পদ্ধতি। কর্মজীবী মানুষ, ব্যাচেলর, শিক্ষার্থী ও যাদের পরিবারে বয়স্ক-অসুস্থ মানুষ রয়েছে তাদের অনেকেই বাজার থেকে মাছ কিনে কেটে-ধুয়ে বাসায় নিতে পছন্দ করে। আর ক্রেতা ধরে রাখতে মাছ ব্যবসায়ীরা ছোট মাছ ও বড় মাছ কাটা ধোয়ার জন্য এমন নারীদের সহযোগিতা করছেন।
ঝিনাইদহের উপ-শহর পাড়ার ওয়াবদা মোড়ের বাজারে প্রতিদিন মাছ কাটতে আসেন মরজিনা খাতুন। অভাবের কারণে তার দুই ছেলেকে লেখাপাড়া করাতে পারেননি, স্বামীও তাকে ছেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় মাছ কাটা-ধোয়ার কাজ করে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পাচ্ছেন তিনি। এতে সংসারের চাকা ঘুরছে মরজিনার। ছোট মাছ কেটে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর বড় মাছ কেটে ধুয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা আয় করেন।
ওয়াবদা কাঁচা বাজারের প্রাচীরের কোল ঘেঁষে সারি সারি দোকান। একপাশে বিক্রি হচ্ছে মাছ। অন্যপাশে কাঁচা সবজি। এর মাঝখানে ধরালো বটি নিয়ে বসে আছেন নারীরা। পাশে রাখা আছে ছাই আর কাঠের গুঁড়া। ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ কিনে এনে তাদের কাছে দাঁড়াচ্ছেন। হাতে থাকা ব্যাগভর্তি মাছ তুলে দিচ্ছেন নারীদের হাতে।
মাছগুলো সযত্নে কেটে পরিষ্কার করে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। মাছ পরিষ্কার করার জন্য বিনিময়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে পারিশ্রমিক। এই বাজারে ১০ থেকে ১৫ জন নারী প্রতিদিন মাছ পরিষ্কার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলা শহরের হাটখোলা মাছের বাজারে আরো ১৫-২০ জন নারী-পুরুষ এভাবে মাছ কাটা-ধোয়ার কাজ করেন।
চলন্তিকা খাতুন। তিনিও মাছ পরিষ্কারের কাজ করেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বাদুরগাছা গ্রামে। তিনি আগে শহরের বাসা বাড়িতে এবং হোটেলে কাজ করতেন। আর এখন মাছ কেটেই যা পয়সা পান, তাতে চলছে চলন্তিকার সংসার।
মাছ পরিষ্কারের কাজে নিয়জিত আরেক নারী কবিতা। তার স্বামী হাসেম মিয়া হোটেলে মেসিয়ারের কাজ করেন। জেলার শৈলকপুর উপজেলা জন্মভিটা ছাড়া, কোনো জাগয়া-জমি নেই। আগে স্বামীর সঙ্গে হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করতেন। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার পরও তেমন বেতন দিত না তারা। তাই কোনো উপায় না পেয়ে এই পেশা বেছে নেন কবিতা।
Posted ৮:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin