বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপরাধের আখড়া আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

অপরাধের আখড়া আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ স্টেশন ও তার আশপাশে প্রতিনিয়ত জুয়া,পতিতাবৃত্তি, চুরি, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিশেষ করে এখানে পতিতাবৃত্তি ও চুরি গত কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানা সত্বেও এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ না করায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চলিয়ে যাচ্ছে। তারা কঠোর অবস্থানে থাকলে এখানে এসব অপরাধ হতো না। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। স্টেশন এলাকায় অপরাধ নির্মূলে তারা দিন রাত কাজ করছেন।

জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চল রেলপথের দ্বিতীয় বৃহত্তর ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন আখাউড়া। এ স্টেশনে ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী ২৪টি আন্তঃনগর ট্রেন আখাউড়ায় যাত্রা বিরতি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মেইল ও লোকাল ট্রেনের যাত্রাবিরতি। প্রতিদিন ওইসব রেলপথে কয়েক হাজার যাত্রী আন্তঃনগর ,মেইল ও লোকাল ট্রেন দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন। তবে প্ল্যাটফর্মে যাত্রী ব্যতীত সাধারণ মানুষ প্রবেশ সংরক্ষিত থাকলেও এখানে অবাধে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম গুলোতে দিন-রাত ছোটাছুটি করে অপরাধীরা। প্ল্যাটফর্মের যাত্রী বসার সিটগুলো মাদকাসক্ত, টোকাই ও বখাটেদের দখলে থাকে।

তাছাড়া সন্ধ্যা হলেই পতিতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। স্টেশন প্ল্যাটফর্ম ও আশপাশের গড়ে উঠা হোটেল, বেশ কয়েকটি পান ও স্টেশনারী দোকানের সামনে সেজেগুজে নানা বয়সের নারী বসে থাকেন। তবে গত কয়েকমাস ধরে পতিতাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পতিতাদের পোশাক, সাজগোজ ও অঙ্গভঙ্গিতে বিব্রতবোধ করেন সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা।

স্টেশন ভিত্তিক একটি চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পতিতাবৃত্তির জন্য এখানে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খদ্দেররা এখানে এসে তাদের সঙ্গে সময় কাটায়। আবার খদ্দেরের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। রমজান শুরু হলে এ নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ বেড়ে যায়।

তাছাড়া স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম, ওভার ব্রিজসহ আশপাশে ভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে টাকা দিয়ে খেলছে লুডু আর তাস। তবে লুডু আর তাস খেলায় অংশ নেয়া মানুষের বেশিরভাগই রয়েছে দিনমজুর আর শ্রমিক।

এদিকে কুলি বাগান, টানা ব্রিজ, রেলওয়ে গেইট, কাটাগাছ এলাকায় প্রায় ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পথচারীদের জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নিচ্ছে।

ছিনতাইয়ের শিকার ট্রেন যাত্রী মো. আশিকুর রহমান বলেন, ভোরে তিতাস ট্রেনে ঢাকা যেতে কাটাগাছ (পুরাতন স্টেশন) এলাকায় আসলে ৪-৫ জন লোক আমার গতিরোধ করে। এরপর দেশীয় অস্ত্র ধরে আমার কাছ থেকে নগদ ২ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

বিজয়নগরের থেকে আসা ট্রেন যাত্রী মো. শামীম মিয়া বলেন, স্ত্রী ছেলে ও বোন নিয়ে কর্মস্থল ঢাকা যেতে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে সন্ধ্যার মহানগর ট্রেনে আমরা উঠি। দরজার মধ্যে কিছুটা ভিড় ছিল। নিজের সিটে বসার পর দেখি আমার প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটি নেই।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, এ স্টেশনে চোখের সামনে অনেক কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। শুধু প্রতিদিন দেখে যাচ্ছি কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না। মাদক,জুয়া আর পতিতা আখাউড়াকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কালাম মিয়া বলেন, স্টেশন এলাকার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হতে চলছে। সন্ধ্যার পর স্টেশন এলাকায় কোনো মেহমান নিয়ে আসা যাওয়া করতে ভয় হয়। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা নারীরা নানান কথা বলে।

মো. মনির খান বলেন, এ স্টেশন এলাকায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি, জুয়া,পতিতাবৃত্তি, মাদক, পতিতাবৃত্তিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামার পর পর স্টেশন এলাকায় পতিতাদের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে। প্রকাশে তারা খদ্দের নিয়ে টানা হেচড়া করে। দিন দিন এখানকার পরিবেশকে নষ্ট করছে। প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বললেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না।

আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, স্টেশনে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে অপরাধে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, আসলে পতিতারা মূলত স্টেশনে নয় তারা বাইরের এলাকায় থাকে। বিষয়টি আমাকে অবহিত করার পর সামাজিকভাবে প্রতিরোধের কথা বলেছিলাম। আইনগত ব্যবস্থার চেয়ে এভাবে প্রতিরোধ বেশি কাজে লাগে। স্টেশন এলাকায় অপরাধ দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যে কোনো মূল্যে অপরাধ নির্মূল করা হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:১০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]