শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবিপ্রবির স্বাধীনতা চত্বর: যেখানে বেঁচে থাকে ক্যাম্পাসের প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

পাবিপ্রবির স্বাধীনতা চত্বর: যেখানে বেঁচে থাকে ক্যাম্পাসের প্রাণ

সকালের বাসটা যখন ক্যাম্পাসে ঢুকল তখন ঘড়ির কাটায় সকাল ৮টা ৪০ মিনিট। কয়েক মিনিটের মধ্যে এক এক করে সবগুলো বাস ক্যাম্পাসে চলে আসলো। শিক্ষার্থীদের একদলের গন্তব্য ক্লাস রুম, একদলের গন্তব্য ক্যাফেটেরিয়া, একদলের গন্তব্য ফটোকপির দোকান। এদের মধ্যে আরেকটা দল আছে যাদের প্রথম গন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) স্বাধীনতা চত্বরের প্রতিদিনকার গল্পটা এমন। ক্যাম্পাস সময়ের রুটিনের মধ্যে স্বাধীনতা চত্বরে আড্ডা দেওয়ার জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখে এ ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। দিনের শুরুতে হোক, মধ্যে হোক কিংবা দিনের শেষে হোক ক্যাম্পাস সময়ের ভেতরে যখন এরা সময় পাবে তখনই এখানে এসে আড্ডা দিয়ে যাবে।

পাবিপ্রবির এই জায়গাটার মূল নাম ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’। তবে এটি স্বাধীনতা চত্বর নামেই সবার কাছে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের নিত্যকার গল্পগুলো নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন এই চত্বরে। কখনো হাসির রোল ওঠে, কখনো গিটারের টুংটাং শব্দ কিংবা কখনো কবিতার দুটি লাইন ভেসে আসে এই চত্বর থেকে। ক্লাস, পরীক্ষার ক্লান্তি শেষ করে এখানে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আসেন শিক্ষার্থীরা। ভাইবা, প্রেজেন্টেশন শেষ করে ছবি তোলার জন্য লাইন দেন সবাই।

সকালের স্লটের ক্লাস শেষ। পরিসংখ্যান বিভাগের সৈকত, তন্ময়, নাবিল, সাইফ, বিশালরা আড্ডা দিতে এসেছেন স্বাধীনতা চত্বরে। প্রতিদিন ক্লাসের আগে কিংবা পরে এদের মতো অনেকেই আসেন আড্ডা দিতে।

আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এ সময় সৈকত বলে উঠল, ক্যাম্পাসে আসার পর প্রথম এই চত্বরেই বসা। তখন ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার মতো তেমন কোনো ভালো জায়গা ছিল না, সবাইকে এখানেই আড্ডা দিতে দেখতাম। তখন থেকে এখানেই সবার সঙ্গে বসি, আড্ডা দেই। ক্যাম্পাসে আসলে এখানে আড্ডা দিয়ে না গেলে শান্তি পাই না।

একটু দম নিয়ে আবার বলে উঠল, এখন ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার মতো অনেক জায়গা তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু, এই স্বাধীনতা চত্বরের মতো আড্ডা অন্য কোথাও জমে না।

তন্ময় নামে উপস্থিত আরেকজন বলে উঠল, এখান থেকে সবগুলো জায়গা কাছে। ক্লাসের সময় হলে এক দুই মিনিটের মধ্যেই ক্লাসে যেতে পারি। ক্ষুধা লাগলে পাশেই ক্যাফেটেরিয়া, পাঠাগারও পাশে। এখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করি। জায়গাটা ক্যাম্পাসের একেবারে কেন্দ্রে হওয়ায় যেকোনো স্থানে সহজে যাওয়া যায়।

ক্লাস শেষ করে গণিত বিভাগের মহিম, জিয়া, আশিক, শোভনরাও এখানে আড্ডা দিতে এসেছে। আশিক জানায়, সবাইকে এখানে পাওয়া যায়। ক্লাসরুম, লাইব্রেরি থেকে এই জায়গাটা কাছে হওয়ায় কাউকে এখানে আসতে বললে বিরক্ত হয় না। চারপাশের পরিবেশটাও সুন্দর। ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার জন্য এটা একটা আদর্শ স্থান।

২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই ভাস্কর্যটি তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন হয়। পরবর্তী আট মাসের মধ্যে এই স্থাপনাটির কাজ শেষ হয়। অনেকের মতে এটিই দেশের মানুষের কাছে পাবিপ্রবিকে পরিচিত করেছে। এই স্থাপনার ছবি দেখে মানুষ বুঝতে পারে এটি পাবিপ্রবি।

২০২০ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে এটিই একমাত্র উন্মুক্ত স্থাপনা ছিল যেখানে শিক্ষার্থীরা হাসি-গানে মেতে থাকত। দিনভর শিক্ষার্থীদের আড্ডা, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। আবৃত্তি, গান, অভিনয়, বিতর্কের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই স্বাধীনতা চত্বর।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ মিনার, লেক, মুক্তমঞ্চ, জনক জ্যোতির্ময়সহ অনেকগুলো স্থাপনা তৈরি হলেও এখনও এই চত্বরের গুরুত্ব কোনো অংশেই কমেনি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো এই চত্বরের সামনেই হয়। ক্লাসের ফাঁকে বাসের জন্য অপেক্ষা করা, বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করা, ছবি তোলা সবকিছু এই স্বাধীনতা চত্বরেই হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পদচারণায় পাবিপ্রবির এই স্বাধীনতা চত্বর সবসময় জাগ্রত থাকে। তাইতো শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ক্যাম্পাসের প্রাণ এই চত্বরেই লুকিয়ে আছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]