শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁশ-বেতের কারুকাজে জীবন গাঁথা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

বাঁশ-বেতের কারুকাজে জীবন গাঁথা

পাশেই পানের বাটা পান চিবুতে চিবুতে বাঁশের বেত দিয়ে বানানো জিনিসপত্রের ফাঁকে নিজেদের জীবনের কাহিনী বর্ণনা করছেন বিধবা হালিমা বেগম। এক একটি বাঁশের তৈরি ঝুড়ি যেন এক একটি পরিবারের হাসি কান্না লুকিয়ে থাকা জীবনের গল্প।

বলছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের হাতিয়া পাড়ার বাসিন্দা বিধবা হালিমা বেগমের কথা। বাঁশের ঝুড়ি বা খাঁচা তৈরি করে যার সংসার। এক সময় হাতিয়া পাড়া, কাজীপাড়া, আদর্শগ্রাম ও পলাশপুরে ঘরে ঘরে বাঁশের ঝুড়ি, খাঁচা-ওড়া-ডালা তৈরি করলেও বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার যত্রতত্র হওয়ার কারণে তাদের অনেকেই পেশা বদল করলেও এখনও হাতিয়া পাড়ার বাসিন্দা বিধবা হালিমা বেগমসহ আমেনা আক্তার ও আন্জুমান বাঁশের ঝুড়ি, কুলা, ডালা বা খাঁচাসহ বাঁশ ও বেতের গৃহসামগ্রী বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তারা।

একটা সময় ছিল উপজেলার অনেকেই বাঁশের ঝুড়ি, ওড়া, ডালা বা খাঁচাসহ বাঁশ ও বেতের গৃহসামগ্রী তৈরি করে সংসার চালাতো। বর্তমানে একদিকে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি আর অন্যদিকে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার দখলের কারণে অনেকেই এ কাজ ছেড়ে জীবিকা নির্বাহে অন্য কাজ করছেন।

সম্প্রতি হাতিয়া পাড়ায় বিধবা হালিমা বেগমের বাড়িতে গেলে বাঁশের ঝুড়ি ও ওড়া তৈরি করতে দেখা যায়।

তিনি জানান, গেল বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁশের ঝুড়ি, ওড়া, ডালা বা খাঁচাসহ বাঁশ ও বেতের গৃহসামগ্রী তৈরি করছেন। এসব বিক্রি করেই তার সংসার চলে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। এখন সব হারিয়ে নিজে নিজেই এসব বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

বাঁশ ও বেতের কাজ করা আরেক নারী কুলসুম বেগম জানান, এখন আর আগের মতো বাঁশ পাওয়া যায় না, দামও খুব বেশি।

সরকারি সাহায্য দাবি করে তিনি বলেন, অনেক কিছুরই দাম বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আমাদের মতো অভাবীদের ভাগ্যের বদল হয়নি। তবে এ কাজে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও দাবি করেন তিনি।

আরেক নারী অজিফা বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালে ঘরের কাজ শেষ করে শুরু করেন খাঁচা-কুলা-ডালা তৈরির কাজ। কখনো কখনো রিকশা চালক স্বামী আর কলেজ পড়ুয়া মেয়েও বাঁশের বেত তুলে দিতে সাহায্য করেন। বাঁশের খাঁচা-ওড়া-ডালা বিক্রি আর স্বামীর উপার্জনে চলে সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ।

পাঁচ বছর ধরে বাঁশের খাচা তৈরি করা রামশিড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, একদিনে ৩টির মতো খাঁচা তৈরি করেন। প্রতিটি খাচা ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হয়। পুরো সপ্তাহজুড়ে খাঁচা তৈরির পরে শনিবার হাটবারে ২২ কিলোমিটার দূরের মাটিরাঙ্গা বাজারে বিক্রি করে থাকেন তিনি। ফলের মৌসুমে বাঁশের খাঁচার চাহিদা বেশি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে বাড়ি থেকেও খাঁচা সংগ্রহ করে থাকেন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল হক বলেন, বাঁশের খাঁচা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহকারীরা যদি সমিতি গঠন করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমিতি গঠন করলে নিয়মানুযায়ী সেই সমিতিকে নিবন্ধনের বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে একই সঙ্গে সমিতি নিবন্ধন হলে প্রতিবছর আর্থিক অনুদান পাওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]