নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
১৯৭১ সালের (৯ ডিসেম্বর) আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় নেত্রাকানা শহর। সেদিন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা মরণপণ লড়াই করে নেত্রকোনাকে পাক হানাদারমুক্ত করে।
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা স্মরণে নেত্রকোনায় নির্মিত ভাস্কর্য ‘প্রজন্ম শপথ’। ছবি: আলপনা বেগম
শহরকে মুক্ত করতে গিয়ে পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লড়াই করে শহীদ হন আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রশিদ।
সেসব সম্মুখ যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে অযত্নে পড়ে থাকা স্মৃতিফলকটি মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে তরুণ কান্তি শিকদার কালেক্টরেট প্রাঙ্গণেই ‘প্রজন্ম শপথ’ নামে সংরক্ষণ করেন।
বীরত্বগাথা দিবসটি স্মরণে ‘প্রজন্ম শপথ’ নামে নির্মিত ভাস্কর্য নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে যোদ্ধা বাহিনীর প্রধান টাইগারখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমদ, যার নেতৃত্বে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তিনি আর দেখে যেতে পারেননি এ উদ্যোগ। সে কারণে যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা ক্ষোভ রয়েই গেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, শহরকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর তিন দিক থেকে পাক সেনা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ চালান। রাজুরবাজার, চকপাড়া, সাতপাই, কাটলী, নাগড়া, কৃষি ফার্ম এলাকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধ চালান।
যুদ্ধকালীন উইং কমান্ডার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামছুজ্জোহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী ও কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, এবার নেত্রকোনা শহর মুক্ত দিবসে সব মুক্তিযোদ্ধার দাবি নতুন প্রজন্মের কাছে এই বীরত্বগাথা ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এ জন্য শুধু এক দিনের আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না।
তারা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই চলে গেছেন। জীবিতরাও থাকবেন না। তাদের থেকে সঠিক ইতিহাস নিয়ে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। সে জন্য জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে খণ্ড খণ্ড তথ্য নিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেয়ারও দাবি তাদের।
নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেত্রকোনা জেলার ৩ হাজার ৪২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। যেখানে কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ৩৪ জন এবং শহীদ হন ৬৬ জন বীর যোদ্ধা।
এদিকে নেত্রকোনায় হানাদারমুক্ত দিবসে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রজন্ম শপথ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। প্রথমে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। পরে একে একে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি বিজয় মিছিল বের হয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোক্তারপাড়া পাবলিক হল মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে পাবলিক হলে মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
Posted ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin