নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো রাজসিক সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শীতের দেশের ফুল টিউলিপ। তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা টিউলিপ বাগান দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তেঁতুলিয়ার ২০ জন নারী উদ্যোক্তা পিকেএসএফের অর্থায়নে ইএসডিওর সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে এ টিউলিপ চাষ করছেন।
শীতপ্রধান দেশে টিউলিপ হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এটি তেমন একটা দেখা যায় না। টিউলিপ চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল ধরা হয়। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে প্রাপ্তবয়সের আগে মানসম্মত ফুল না-ও ফুটতে পারে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) সহায়তায় ইএসডিও জেলার তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ ফুল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত জানুয়ারিতে ১০ প্রজাতির ১ লাখ টিউলিপ ফুলের বাল্ব রোপণ করা হয়। এরই মধ্যে দুই একর জমিতে অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট, ডেনমার্ক, লালিবেলাসহ ১০টি ভিন্ন রঙের ফুল ফুটেছে বাগানে। আর তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা।
টিউলিপ চাষ নিয়ে উদ্যোক্তা ও সহযোগীরা জানান, গত বছর লাভের মুখ দেখেছেন তারা। তাই প্রথম পর্যায়ে ১৫ শতক জমির পরিবর্তে দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই একর জমিতে টিউলিপ রোপণ করেছেন।
কিষানি আনোয়ারা বেগম ও নারগিস বেগম সময় সংবাদকে বলেন, ‘ইউএসডিওর সহায়তায় আমরা প্রথমবার টিউলিপ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি।’
গৃহিণী হারিজা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একেকটি টবসহ ফুল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। অল্প সময়ের মধ্যে হওয়া এই ফুল চাষ করে আমরা লাভবান হব বলে আশা করছি। আর এবার লাভবান হলে ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ করতে চাই।’
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, তেঁতুলিয়া শীতপ্রধান অঞ্চল হওয়ার পাশাপাশি পর্যটকপ্রিয় এলাকা। বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপের চাষ হওয়ায় যেমন উদ্যোক্তারা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ করতে কৃষকদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
ইএসডিওর পরিচালক ড. সেলিমা আখতার জানান, একসময় দর্শনার্থীরা কাঞ্চনজঙ্ঘা, চাবাগান দেখতে আসত তেঁতুলিয়ায়। এর পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে শীতপ্রধান দেশের রানি টিউলিপ।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে উৎপাদিত এসব ফুল বিক্রির জন্য এরই মধ্যে ঢাকার ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়বারের মতো তেঁতুলিয়ার সমতলে চাষ হয়েছে বিদেশি ফুল টিউলিপ। ইএসডিও চাষিদের চাষাবাদের জন্য নেদারল্যান্ডস থেকে এই ফুল এনে বিতরণ করেছে। জানুয়ারিতে বাল্ব রোপণে কলি আসার পর ২৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। বাল্বের পাশাপাশি বিনা মূল্যে রাসায়নিক স্যার, জৈব সার, খৈল, শেডনেটসহ হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুল চাষাবাদে উপযোগী করা হয় চাষিদের। এদিকে ২ একর জমির ১ লাখ টিউলিপ ফুল মাত্র দুই মাসে বিক্রির মাধ্যমে কিষানিরা উল্লেখযোগ্য আয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
Posted ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin