দিলীপ কুমার আগরওয়ালা | মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
স্বাধীনতার মাস মার্চে আরও ৪০ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে নিজেদের ঘর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় ২ লাখেরও বেশি অসহায় মানুষ তাদের ঠিকানা ফিরে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিল মুজিববর্ষে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, তা বাস্তবায়নকেও প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। এ পর্যন্ত তিন দফায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের জুন থেকে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ইতোমধ্যে তিন ধাপে প্রত্যেকটি উপকারভোগী পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে।
‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চতুর্থ ধাপের ঘরগুলো মার্চের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তান্তর করবেন এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর দেখানো পথেই বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজারের গৃহহীনদের গৃহায়নে একটি প্রকল্প শুরু করেন।
‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য বাড়ি। দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা দুই রুমের ঘর করে দেওয়া হয়েছে মাথার ওপর ছাদহীন বহু মানুষকে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ, আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা। ভূমিহীন ও গৃহহীন যেকোনো বয়সের মানুষই এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। তবে প্রতিবন্ধী, বিধবা, প্রবীণ ও স্বামী পরিত্যক্তদের অসহায়ত্বের বিষয়টি বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অর্জনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। উপহারের এসব বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে লাখো সহায়-সম্বলহীন মানুষের জীবন। যে মানুষগুলোর বেঁচে থাকাটাই ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, এখন তাদের চোখেমুখে স্বাবলম্বী জীবনের হাসির ঝিলিক।
বাংলাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অন্যতম উদ্ভাবন হচ্ছে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। একটি ঘর একটি ছিন্নমূল পরিবারের দারিদ্র্য হ্রাসসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এটি এখন প্রমাণিত। প্রতিটি নিরাপদ গৃহ পরিবারের সকলকে করে তোলে আস্থাবান, প্রত্যয়ী এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী। মুজিববর্ষে এসে দ্রুততম সময়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে জাতির পিতা সূচিত গৃহায়ন কর্মসূচিকে তিনি নতুনরূপে উপস্থাপন করেন। জাতির সামনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পকে অধিকতর যুগোপযোগী ও টেকসই করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নতুন ডিজাইনের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার-আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করায় তারা যেমন মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে ঠিক তেমনি পেয়েছে নতুন জীবনের ঠিকানা। তাদের বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা, পানি নিষ্কাশনেরও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকের বেকারত্ব দূর হয়েছে, ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে, সমাজে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে তারা। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তারা।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি ছিল দেশবাসীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা। দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশে পাঁচ দশকে চাষযোগ্য জমি অর্ধেকে নেমে এলেও এবং জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বাধীনতার আগে বিদেশে পুরনো পোশাকের ওপর নির্ভরশীল ছিল সে দেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক। চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশে। গৃহহীনদের গৃহদান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার পূরণে দেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
Posted ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin