রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্চিং পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্চিং পদ্ধতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ধানক্ষেতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতে রাখা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এসবের ওপর বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এ পদ্ধতিকেই ‘পার্চিং’ বলা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কম খরচে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসল উৎপাদন।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ৬৫ শতাংশ জমিতে পার্চিং হয়েছে। শতভাগ পার্চিয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। আগে স্থানীয় কৃষকরা ধান লাগানোর পর জমিতে পার্চিং করতে চাইতো না। ফলে তাদের জমিতে ফলন ও কম হত। বর্তমানে এ পদ্ধতি কৃষকদের খুবই উপকারে আসছে পূর্বের চাইতে ফলনও বাড়ছে। তবে পাচিং পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোতা ডাল গুলোর উপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলায় কিটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

সরেজমিনে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নর ধাতুরপহেলা কুসুমবাড়ি, টানুয়াপাড়া, পৌর শহরের তারাগনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো জমিতে স্থানীয় কৃষকরা বাঁশের আগা ও গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ডাল পুঁতছেন। সব ধরনের পাখি পার্চিংয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা- এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম ও পুত্তলি খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতিমাসে হাজার হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে। সাধারণত বন্ধু পোকামাকড়গুলো খাবার সংগ্রহের জন্য বেশি নড়াচড়া ও চলাফেরা করে।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. সুরুজ মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। আবাদকৃত জমির মধ্যে তিনি বাঁশের কি ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে পাখি এসে বসে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করায় তুলনামূলক খরচ কমেছে সেইসঙ্গে ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করত। পোকা দমনে জমিতে দিলেও কাজ হয় না। এরপর কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে বলে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় এখন সুফল পাচ্ছি।

কৃষক রমজান মিয়া জানান, পাচিং পদ্ধতিতে ধান চাষ করা খুবই পরিবেশ বান্ধব। ধানের চারা রোপণের পর পর বাঁশের আগা, কি ও গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে রাখলে জমিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায়। কীটনাশক কম লাগার ফলে ফলন ভালো হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, সাধারণত ধানগাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পোকাখাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে।

তিনি আরো বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। সেইসঙ্গে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও কম হয়। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির চাষ। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে সেটা শতভাগ হয়ে যাবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]