রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতের আঁধারে লুট হওয়া ভোটাধিকার ফেরত আনা জরুরি: কাদের গনি চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

রাতের আঁধারে লুট হওয়া ভোটাধিকার ফেরত আনা জরুরি: কাদের গনি চৌধুরী

‘বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিবারের জমিদারিতে পরিণত হয়েছে। ওই পরিবার যাই করুক কোনো সমালোচনা করা যাবে না। সমালোচনা করলেই চৌদ্দ শিকের ভাত খেতে হবে। দেশের মালিক নাগরিকদের আজ দাসে পরিণত করা হয়েছে।

দেশে এক ভয়ানক দু:শাসন চলছে উল্লেখ করে পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় মানুষ আজ ন্যায় বিচার বঞ্চিত। অপরাধীরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিবাদকারিরা হচ্ছে জুলুমের শিকার। আজ মানবাধিকার র‍্যাবের তপ্ত বুলেটে ক্ষতবিক্ষত।গণতন্ত্র পুলিশের বুটের তলায় পৃষ্ঠ। মানবতা আজ “আয়নাঘরে” আহাজারি করছে। মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে বাকস্বাধীনতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত করা হয়েছে।হরণ করা হয়েছে গণতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রের খোলসের ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার আজ মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, ধর্ষণ সহ্যসীমা ছড়িয়ে গেছে।এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাতের আঁধারে লুট হয়ে যাওয়া মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা।
আজ ৮ এপ্রিল শনিবার বিকেলে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কর্ণেল (অব:) আজিম উল্লাহ চৌধুরী বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী।অন্যদের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জহির আজম চৌধুরী, ইদ্রিস মিয়া ইলিয়াস, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী , সারোয়ার হোসেন , আলহাজ্ব এজহার মিয়া,শওকত উল্লাহ চৌধুরী,এডভোকেট আফসার উদ্দিন হেলালি , মোরশেদ হাজারী,নুরুল আমিন আজাদ, মাহমুদুল হাসান দিলু, শহিদুল ইসলাম, আজিজ উল্লাহ,মইনুল্লাহ উজ্জল,রায়হানুল আনোয়ার রাহী, শফিউল আজম চৌধুরী, হাসান চৌধুরী দিপু,আবদুল্লাহ আল মামুন, ইঞ্জিনিয়ার বেলাল উদ্দিন মুন্না, ইলিয়াস মেম্বার, খোরশেদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

পেশাজীবীদের এ শীর্ষ নেতা বলেন, দেশ আজ একটি দল ও পরিবারের হাতে জিম্মি। কোথাও কাউকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। স্বাধীন দেশে আজ ভিন্ন মত দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সামাজিক ভিত্তি রচনা করা হচ্ছে। ক্ষমতার লিপ্সা রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সুতরাং দেশ ও জনগণের স্বার্থেই এ অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন ও রাষ্ট্র মেরামত আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের শাসন। আর এই শাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয় মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-এটাই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মূল শর্ত। দুর্ভাগ্য মানুষ এখন আর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না। এমনকি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দিতে পারছে না। আমরা দেখলাম, দিনের ভোট আগের দিন রাতেই হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনেও আইনজীবীরা ভোট দিতে পারে নি।এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা ভোট দিতে পারে নি।এভাবে সর্বস্তরে ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে।ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া মানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা।যা প্রতিনিয়ত এ বিনাভোটের সরকার করছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে এর চাইতে বড় লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,গণতন্ত্র বলেন, আইনের শাসন বলেন, সুশাসন বলেন, জবাবদিহিতা বলেন-এর সবকিছুই নির্ভর করছে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর। সে অধিকার এখন আর এ দেশের মানুষের নেই, ফ্যাসিস্ট সরকার গায়ের জোরে কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের ন্যুনতম মানদন্ডও মানা হচ্ছে না। তাই সবার আগে লুট হয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজন সরকারি প্রভাবমুক্ত, কারসাজিমুক্ত নির্বাচন। কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানলড়াই করেছেন।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠাতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,নির্বাচন কমিশন সরকারের একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। এটি হলে সুশাসন, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা আপনা আপনি নিশ্চিত হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন দেশে এসবের কিছুই নেই। দেশ আজ একটি দল ও পরিবারের হাতে জিম্মি। কোথাও কাউকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। বিনা ভোটের জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আগে এমপি হতো বিনা ভোটে। এখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও নির্বাচিত হচ্ছেন বিনা ভোটে। সরকারি দলের প্রার্থীরা জনগণের মতামত নেওয়ার বিষয়টি তোয়াক্কাই করছেন না। উন্নয়নের নামে বিলাসী ও মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। দুর্নীতি-লুটপাট, অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি তো মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভ বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। বেকারত্ব যে বহুগুণে বেড়েছে, সে কথা বলা হচ্ছে না। আজ অর্থাভাবে মানুষ কিডনি বিক্রি করছে, সন্তান বিক্রি করছে :সে কথা উচ্চারণও করা যায় না। একজন শ্রমিক তার তিন বেলা ভাতের স্বাধীনতা চেয়েছিল, এটি প্রথম আলো কেন ছাপালো পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো। প্রতিবেদককে নিশিরাতে তুলে নেয়া হলো। গুম থাকলো ২০ ঘন্টা ,তারপর তাকে আদালতে তোলা হলো।
দেশে নতুন কোনো কর্মসংস্থান নেই। বিনিয়োগে হাজারটা বাধা। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বেগম পাড়ার ঘটনা তো সবারই জানা। এভাবে একটা রাষ্ট্রকে ফোকলা করে ফেলেছে এসরকার।

ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী বলেন,আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বক্স ভর্তি করে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী গণধিকৃত এই সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হুঁশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, খুন করে, রক্ত ঝরিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। দেশের জনগণ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারা দুঃশাসনের অবসান চায়। তারা বাঁচার মতো বাঁচতে চায়। তারা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। সব পেশাজীবীসহ দেশবাসীকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

(কর্ণেল অব:) আজিম উল্লাহ বাহার বলেন, সরকার দলীয়করণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস ও নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এই সরকার দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। আজ ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ।মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।সে কারণে রাষ্ট মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:০২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]