শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুটপাতেই যেন ঈদ আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

ফুটপাতেই যেন ঈদ আনন্দ

রোজা শুরু হতে না হতেই বুড়ো থেকে গুড়া-সকলের ভেতর ঈদুল ফিতরের একটি উৎসব শুরু হয়ে যায়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রে থাকে নতুন জামাকাপড়। রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়। রাজধানী ঢাকার শপিং মলগুলো ১৫ থেকে ২০ রোজার পর জমতে শুরু করে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষদের কেনাকাটার ভরসার একমাত্র জায়গা শহুরে ফুটপাত। যেখানের কেনাকাটা জমে ওঠে আরো আগে থেকে। ঈদ বাজারে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিক্রিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকে। ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসতে থাকে, ব্যস্ততার ভিড়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দম ফেলার সুযোগ ততই কমতে থাকে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলে ফুটপাতে ঈদের বেচাকেনা। নিউমার্কেট, গাউছিয়া, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশ, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়ক, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন এলাকা, চাঁদনীচক, মিরপুর-১০, মিরপুর-১, ঢাকা উত্তরা হাউজ বিল্ডিং সংলগ্ন ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে চলে বেচাকেনা।

প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি জমে ওঠা বঙ্গবাজারে হতাশার কালোমেঘ উড়ছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। সাড়ে ৬ ঘণ্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও বাঁচানো যায়নি একটি দোকানও। বঙ্গবাজার দেশের পাইকারি কাপড়ের অন্যতম প্রধান মার্কেট হিসেবে পরিচিত ছিলো। এই মার্কেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হাওয়ায় এবার ফুটপাতে জামাকাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি বলছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতারা।

দুপুর থেকে মিরপুর-১০-এর ফুটপাতে বিভিন্ন ধরণের পরিধেয় পোশাকের পশরা নিয়ে বসতে শুরু করে দোকানীরা। এখানে ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, জুতা, প্যান্টের বেল্ট, ঘড়ি, চশমা, টুপি থেকে শুরু করে সকল কিছুই পাওয়া যায়। একই সঙ্গে মেয়েদের থ্রি পিস, টু পিস, স্কার্ট, লেহেঙ্গা, ছোট-বড় ফ্রক, নানা ধরণের কসমেটিকসও এখানে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, কেনাকাটা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে হাল্কা বিরতি দিয়ে চা, ফুচকা, ঝাল মুড়ি, পেয়ারা কাসুন্দি, খিচুড়ি মাংস খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে এই ফুটপাথের কোথাও কোথাও।

রেহমুনা-শরিফ দম্পতি থাকেন মিরপুরের কালসিতে। দু’জনেই পোশাক শ্রমিক। ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ঈদের শপিং করেছেন। ফুটপাতের মার্কেটে জামাকাপড়ের দাম কেমন জানতে চাইলে ডেইলি বাংলাদেশকে রেহমুনা বলেন, আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের অনেকটা হাতের নাগালে। তবে এবার একটু বেশি মনে হচ্ছে। যে জামা গতবার ২৫০-৩০০ টাকায় কিনেছি, এবার সেই জামা ৪০০-৫০০টাকায় কিনতে হচ্ছে। দামাদামি করে না কিনলে দোকানদাররা সুযোগে বেশি রাখারও চেষ্টা করে।

কবির হোসেন, মিরপুর-১০-এ প্রায় একযুগ ধরে ব্যবসা করছেন। রেহমুনার অভিযোগকে প্রশ্নে রূপান্তর করে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, প্রতি বছর দাম বাড়তি থাকে। আপনে দেহেন বাজারের কোন জিনিসের দাম বাড়ে নাই। তাছাড়া বঙ্গবাজারে আগুন ধরায় জামাকাপড় মার্কেটে কম। তাই একটু বেশি। তবে খুব বেশি যে তাও না। ধরেন একটা শার্ট কোয়ালিটি ভেদে গতবার বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৪০০টাহায়। এইবার সেই শার্ট বিক্রি হইবো ৪৫০ থেকে ৫০০টাহায়। একটা জিন্স প্যান্ট গতবছর বিক্রি হরছি ৪০০ থেকে ৫০০টাহায়, এবার হেডা ৫০০ থেকে ৭০০ টাহায়।

দামাদামি করে না কিনলে দোকানদাররা সুযোগে বেশি রাখার চেষ্টা করে এমন প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন, সবাই জানে ফুটপাতে একটু বেশি দাম চাওয়া হয়। একটু দাম না চাইলে লাভ করা যায় না। ধরেন একটা শার্ট আমার কেনা ৩০০টাকা আমি যদি ৬০০টাকা না চাই লাভ করতে পারবো না। কারণ, আমি যা দাম চাইবো যে কিনবে সে তার অর্ধেকও দাম কয় না। এই জন্য একটু বেশি চাওয়া হয়। তবে আমরা খুব বেশি লাভ করি না। আমরা নিজেরাই অল্প আয়ের মানুষ। আমাদের ক্রেতারাও তেমন। আমারা আমাদের দুঃখ বুঝি।

অভিজাত শপিং মলে যেমন এক দামের দোকান আছে, তেমনি ফুটপাতেও পাওয়া যায় এমন দোকান। মিরপুর-১-এর ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ কানে আসে, ‘লইয়া যান ২০০, এক দাম ২০০, যেইটা নিবেন ২০০, এক্সপোর্টের মাল ২০০।’ বিশ বছরের টগবগে যুবক সবুজ তার ছোট দোকানের গোলগলা গেঞ্জি বিক্রি করছেন এভাবেই। কেমন বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ১০ রমজান থেকে বিক্রি একটু একটু বাড়ছে। একদামের দোকান আমার, যার যেটা পছন্দ হয় টাকা নিয়ে যায়। কদিন আগেও ১৫০টাকা বিক্রি করছি কিন্তু এই সময় আমার বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই পঞ্চাশ টাকা বাড়ায়ছি।

মিরপুর-১, ১০-এর মতো ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত জুড়ে বছরের প্রতিদিনই এই ক্ষুদ্র দোকানিরা তাদের ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেন। বিত্তবানদের জন্য না হলেও, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই দোকানগুলো আশীর্বাদস্বরুপ। তবে ঈদ মার্কেট এখানেই শেষ না, ঈদকে সামনে রেখে বসে নেই মৌসুমি হকাররাও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ট্রাফিক সিগনালে থামা গাড়িগুলোর দিকে ছুটছেন একেকজন। কারো হাতে আতর, কারো হাতে টুপি কারো হাতে নামাজ শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের বই সামগ্রী। যানজটে গাড়িতে বসে থাকা মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন এই ভাসমান হকাররা। তাদের বিক্রিও নেহাত কম হচ্ছে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:২২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]