গ্রামের মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সেখানে একটি পরিবারে প্রতি মাসে গড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা আয় করে। অথচ ব্যয় হয় গড়ে ২৬ হাজার ৮৪২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পরিবারে মাসে যা আয় করে তার চেয়ে ব্যয় বেশি হয় ৬৬৯ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপে গ্রামের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
নতুন জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ খানা পর্যায়ে আয় জাতীয় পরিমাণের চেয়ে প্রায় সাড় ৬ হাজার টাকা কম। সারাদেশে পরিবার প্রতি গড় আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। অন্যদিকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের চেয়ে ব্যবধান তুলনামূলক কম। ৪ হাজার ৬৫৮ টাকা। পরিবার প্রতি জাতীয় ব্যয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। এর অর্থ জাতীয় আয়ের চেয়ে গ্রামের পরিবারগুলো অনেক পিছিয়ে আছে। তবে জাতীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সমান চাপ সামলাতে হচ্ছে।
বিবিএসের বিগত খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণেও গ্রামীণ পরিবারে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ২০১৬ সালের জরিপে গ্রামীণ পরিবারে মাসিক আয় ছিল ১৩ হাজার ৮৬৮ টাকা। ওই সময়ে ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ১৫৬ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে মাসিক আয়ের চেয়ে ব্যয় ২৮৮ টাকা বেশি ছিল। এবারের জরিপে পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ২৬ জন।
কম আয় অথচ বেশি ব্যয় তাহলে বাড়তি ব্যয় কীভাবে মেটাচ্ছে গ্রামীণ পরিবারগুলো– জানতে চাইলে বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আয়- ব্যয়ের ব্যবধান মেটাতে পরিবারগুলো হয়তো ধারদেনা করে চলছে। অথবা আয়ের সঠিক তথ্য জরিপকালে তারা দেয়নি। আয়ের তথ্য জানাতে ঐতিহাসিকভাবেই মানুষের মধ্যে একটা ভীতি বা সংকোচের প্রবণতা আছে। ব্যয়ের তথ্য তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছে। তবে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কীভাবে মেটাচ্ছে মানুষ সে তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করা হয়নি জরিপে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামে পরিবারগুলোতে খাদ্যের পেছেনেই বড় ব্যয় হয়। এ বাবদ মাসে ব্যয় হয় ১৩ হাজার ১২৫ টাকা। ২০১৬ সালের জরিপে খাদ্য খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে খাদ্যের পেছনে ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুসারে, গ্রামীণ পরিবারে খাদ্যের পেছনে গড় ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৫৪৩ টাকা।
খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় প্রসঙ্গে এবারের জরিপে দেখা যায়, গ্রামীণ পরিবারে এ খাতে মাসিক ব্যয় ১৩ হাজার ৮২ টাকা। ২০১৬ সালের জরিপে এ পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৬৬ টাকা। অর্থাৎ গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত খাতেও ছয় বছরের ব্যবধানে ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০ সালের জরিপে এটি ছিল ৩ হাজার ৮৯৩ টাকা। খাদ্যবহির্ভূত খাত হিসেবে কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেল, স্বর্ণ, পরিবহন ও যোগাযোগ, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয়কে বুঝিয়ে থাকে বিবিএস।
পরিবারের বাইরে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে দেখা যায়, গ্রামে মাথাপিছু আয় ৬ হাজার ৯১ টাকা। জাতীয় মাথাপিছু আয় ৭ হাজার ৬১৪ টাকা। ২০১৬ সালের জরিপে গ্রামীণ এবং জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ২৬১ টাকা এবং ৩ হাজার ৯৪০ টাকা।