সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিরনিদ্রায় শায়িত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

চিরনিদ্রায় শায়িত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

নিজ হাতে গড়া সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পঞ্চম জানাজা শেষে সূচনা ভবনের সামনে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে, সকাল ১০টার দিকে গণস্বাস্থ্য পিএইচএ মাঠ প্রাঙ্গণে নেয়া হয় ডা. জাফরুল্লাহর মরদেহ। সেখানে তার প্রতি শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সর্বস্তরের মানুষ।

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও অনেকে শেষ বিদায়ে অংশ নেন।

এরআগে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।

একই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়।

এরপর দুপুর আড়াইটায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়।

ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারের সমস‌্যাও দেখা দেয়।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে জন্ম নেন। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতা-মাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

ডা. জাফরুল্লাহ ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।

স্বাধীনতার পর মেলাঘরের সেই ফিল্ড হাসপাতালকে ঢাকার ইস্কাটনে নিয়ে আসেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, পরে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘চল গ্রামে যাই’ এই স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নামকরণ হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর নারীর ক্ষমতায়নে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক কর্মী নেয়া হয়েছিল নারীদের মধ্য থেকে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ডা. জাফরুল্লাহ ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]