শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরে টেন্ডারবাজি বিরুদ্ধে কর্মসূচীতে বাঁধা প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

ফরিদপুরে টেন্ডারবাজি বিরুদ্ধে কর্মসূচীতে বাঁধা  প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

 

ফরিদপুরে একটি সরকারী অফিসের লাগামহীন টেন্ডাবাজী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়ে পৌর আওয়ামীলীগের নেতারা। সংঘাত এড়াতে স্থান পরিবর্তন করে ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল ফরিদপুরে এলজিইডি, বিএডিসি সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অব্যহত টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর সরব হয় ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগ সহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।সেদিন ফরিদপুর

প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ক্ষমতাসীন দলের টেন্ডারবাজ নেতাদের উদ্যেশ্যে হুশিয়ারী দেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বিএডিসি(সেচ) অফিসের সামনে বুধবার মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি দেয় পৌর আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ।

ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মনিরের এর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মনির ও সদস্য মোঃ জামালউদ্দিন কানু। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান বাবলু, সাইদুর রহমান, আবুল হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, এস এম কামাল, শরীফ ইমরান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার সোহাগ প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসক মোঃ

কামরুল আহসান তালুকদারে কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে ফরিদপুর বিএডিসির সেচ প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং প্রজেক্ট ডাইরেক্টর পংকজ কর্মকারের দুর্নীতি তদন্তের দাবী জানিয়ে বলা হয়, ‘‘বিএডিসির ফরিদপুর সেচ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর পংকজ কর্মকার ফরিদপুর হারোকান্দি সেচ ভবনে অফিস করেন।তিনি ইচ্ছামত, বেশীর ভাগ সময়ে ঢাকা থাকেন । প্রতিটি টেন্ডার আহ্বান করেই তিনি গা ঢাকা দেন। তার মনোনীত কিছু ঠিকাদার ও অফিসের কিছু দূর্নিতীবাজ অফিস কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫% টাকা নিয়ে আইডি বিক্রি করে রেট দিয়ে দেন। দরপত্র ওপেন করে তদন্ত করে দেখেন ওনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কেউ কাজ পান না, কারন সঠিক রেট উনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কারো কাছে নেই ।

 

সর্বশেষ টেন্ডারে আইডি ৮০৮৮৭৯ থেকে ৮০৮৯৪১ পর্যন্ত ৬২ গ্রুপ কাজ প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজে ১ কোটি টাকা ভাগ করে নিয়েছেন ফরিদপুরের আলোচিত রাজনৈতিক গডফাদাররা ও পিডি পংকজ কর্মকার । পিডি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজস্ব মনোনীত ঠিকাদার দের মাঝে কাজ বন্টন করেছেন । তার সাথে জড়িত ফরিদপুরের একজন আলোচিত শ্রমিক নেতা, তার পার্টনার বিএডিসির সিন্ডিকেটের সদস্য, স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা আর তাদের পিছনের শক্তি বর্তমান ক্ষমতাধর দলীয় গডফাদাররা।

পিডি এমনে সময় অফিস করেন না, কিন্তু ঠিকাদারী বিল নেয়ার সময় ঠিকই ব্যাগ নিয়ে হাজির হন তার পিসির ৭% টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় । পিডি পংকজ এর আগে পাইপ ছাপ্লাইয়ের টেন্ডার করে তার আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিম্নমানের পাইপ সাপ্লাই দিয়েছেন। বিএডিসির

গোডাউন চেক করলে এবং যারা বারিড পাইপের কাজ করেছেন এমন ঠিকাদারদের কাছে খোজ নীলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। অধিকাংশ পাইপ সাইটে নেয়ার সময় সামান্য ঝাকিতে ভেঙ্গে যায়। আবার গোডাউনে অনেক পাইপ ফাটা অবস্থায় আছে।

বিএডিসির মত এমন একটি জনগুরুত্ব সম্পূর্ন অফিস যেখানে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি কাজের সুবিধার্থে সেচের পানির সুব্যবস্থা করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করার কথা, উল্টো সেখানে হয় ব্যাপক দূর্নিতী । শুনলে অবাক হবেন এই প্রকল্প এরিয়া নির্ধারনে পিডি কৃষকদের মাঝ থেকে দালালদের মাধ্যমে প্রকল্প পাশের নামে ১০% টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। যারা টাকা দেন না তাদের প্রকল্প পাশ হয় না।

বিএডিসির অনেক নতুন লাইসেন্সধারী আছেন যারা বিগত ৫ বছর ধরে লাইসেন্স ফি দিয়ে

যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে এলটিএম টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। এলটিএম করে টেন্ডার করলে লটারী হবে, লটারিতে বিএডিসির তালিকাভূক্ত সকল ঠিকাদার অংশগ্রহন করতে পারবে। লটারিতে কাজ পেলে তো ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না পিডি। তাই সুকৌশলে পিডি রেট দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য টেন্ডার ওটিএম করেন।

আমাদের দাবী টেন্ডার ওটিএম করলে রেট ওপেন করতে হবে, যার কাজ নেয়ার যোগ্যতা আছে তিনিই কাজ পাবেন। আর তা না হলে এলটিএম টেন্ডার আহ্বান করেন, সবাই লটারীতে অংশগ্রহন করি। এই দুটি প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ। অথচ এই প্রক্রিয়া পিডি অনুসরন না করে শুধুমাত্র নিজের এবং কিছু অসাধু রাজনীতিকের সুবিধার জন্য রেট গোপনের টেন্ডার আহ্বান করেন । আপনাদের মাধ্যমে বিএডিসি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি এই অনিয়মের টেন্ডার বাতিল করার

এবং প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের দূর্নিতী ও স্বজনপ্রীতি সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বেলা ১১টা দিকে শহরের হারোকান্দিতে ফরিদপুর বিএডিসি(সেচ) অফিসের সামনে মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি করতে গিয়ে তারা বাধার মুখে পড়েন। স্থানীয় একজন পৌর কাউন্সিলের নেতৃত্বে একদল যুবক তাদের বাধা দিয়ে সরিয়ে দেয়।সাড়ে ১১টার দিকে কর্মসূচীর মাইক বহনকারী রিক্সাটি সেখানে গেলে যুবকরা রিক্সাটি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। সেখানে একজন শ্রমিক নেতার সমর্থক একদল লোক গেটের সামনে পাহারা বসিয়ে অবস্থান নেয়।

তবে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর পংকজ কর্মকার বলেন, যিনি বা যারা এসব অভিযোগ করছেন

তারা কেউই বিএডিসির তালিকাভূক্ত ঠিকাদার নন। এধরনের অভিযোগ করারই কোনো এক্তিয়ার তাদের নেই।তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টেন্ডার আহবান করি। এই প্রকৃয়ায় দেশের যেকোনো যায়গা থেকে বাড়ীতে বসে যোগ্যতা সম্পন্ন যে কেউ অংশ নিতে পারেন। গোপন রেট পছন্দের ঠিকাদারদের জানিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বিকার করে ওই কর্মকর্তা বলেন, মনগড়া ও ভিত্তিহীন যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা হাস্যকর।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৪৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]