শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর: নতুন মাত্রা পাবে দুই দেশের সম্পর্কে

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি   |   শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর: নতুন মাত্রা পাবে দুই দেশের সম্পর্কে

বন্ধু দেশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফরে দুই দেশের মধ্যে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক যে ইতোমধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছেছে তা কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্পোন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্কসংক্রান্ত বিষয়, মেধাসম্পদ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের চুক্তিতে আরও স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং শেখ হাসিনা সম্পর্কের আদ্যোপান্ত আলোচনা করেছেন।

উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছানোর বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককালে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বহুমুখী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখারও দেওয়া হয়েছে আশ্বাস। চুক্তি স্বাক্ষর করে যৌথ বিবৃতি প্রদানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

চীন ও ভারতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে জাপানের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হলো বাংলাদেশের। বিষয়টি অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সর্বোপরি ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে নিঃসন্দেহে গুরুত্ব বহন করে। কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কিত যৌথ বিবৃতিতে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ। ৩০ দফা যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশ ও জাপানের আগামী দিনগুলোর সম্পর্কের রূপরেখা প্রতিফলিত হয়েছে। এ অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশই আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও শৃঙ্খলা মেনে চলে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেছে। গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন। যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ও ফুমিও কিশিদা মিয়ানমার পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে টোকিওর একটি হোটেলে বাছাই করা জাপানি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক খরচ, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা, বিশাল অভ্যন্তরীণ ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত থাকায় বাংলাদেশ দ্রুত বিনিয়োগের অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালে আমি টোকিওতে আপনাদের সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলাম। আমি খুশি তার পর থেকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনেক কিছু ঘটেছে। বাংলাদেশ ও জাপান গত বছর দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে যখন আমরা আমাদের বিস্তৃত অংশীদারি এবং বিগ-বি উদ্যোগের অধীনে জাপানের প্রতিশ্রুতিতে প্রবেশ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানি ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের ব্যবসার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে অনুসরণ করছেন এবং তারা জাপানের বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ অথবা বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা চালু করতে ইতিবাচকভাবে ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমার আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমার সরকার এবং সব সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় আপনাকে এবং জাপানে আমাদের অন্য বন্ধুদের সাহায্য করতে আগ্রহী।’ বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

সম্প্রতি ভারত সফরে এসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে জাপান কাজ করবে। এই সহযোগিতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে গোটা অঞ্চলকে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী করে তোলা। উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান অর্থনৈতিক পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে আগ্রহী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাঁর নজর এড়ায়নি উল্লেখ করে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে সেই সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগী হওয়ার ইচ্ছার কথাও উচ্চারণ করেন তিনি। তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই শেখ হাসিনার এই সফরে।

যে কয়েকটি দেশ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছিল জাপান তাদের মধ্যে একটি। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জাপান যখন চরম কোণঠাসা অবস্থায় তখন একজন বাঙালি বিচারপতির রায় জাপান সম্রাটকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রেহায় দেয়। যা জাপানিদের মধ্যে বাঙালিদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। যে কারণে জাপান ওয়াশিংটনের ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করেই ১৯৭২ সালের শুরুতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরকালে যমুনার ওপর সেতু নির্মাণে অর্থায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের বন্ধুত্ব ইতোমধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছে। যা আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে জাপান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে জাপান আনুমানিক ২৪.৭২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ও ঋণ দিয়েছে। ১৯৮০ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সহায়তাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে জাপান সর্বোচ্চ দাতা দেশ। জাপানের সহায়তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যমুনা সেতু। জাপানের অর্থায়নে এগিয়ে চলছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]