বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জোড়াতালি দিয়ে চলছে কারিগরি শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

জোড়াতালি দিয়ে চলছে কারিগরি শিক্ষা

দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উদ্দেশ্য, কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমানো। তবে বাস্তবেই কী কোনো ভূমিকা রাখছে কারিগরি শিক্ষা? সরেজমিন খুঁজলে দেখা যাবে উল্টো চিত্র। যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষক সংকটে রীতিমতো ধুঁকছে কারিগরি শিক্ষা।

দেশে তিনটি স্তরে কারিগরি শিক্ষার পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এগুলো হচ্ছে- সার্টিফিকেট স্তর (এইচএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও বেসিক ট্রেড কোর্স); ডিপ্লোমা স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং ডিগ্রি স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে বিএসসি-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-টেকনিক্যাল এডুকেশন)।

এর বাইরে বিভিন্ন মেয়াদি শর্টকোর্স আছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৬৮৪টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৩০ জন শিক্ষা গ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংকট চরমে। বেশিরভাগ জায়গায় ক্লাসই হয় না ঠিকমতো।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৯১টি। যেখানে শিক্ষকের পদ ১৫ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে এখনো অর্ধেকের বেশি শিক্ষক পদ ফাঁকা। শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মচারী সংকটও ধারণ করেছে প্রকট আকার।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৮২ শিক্ষক পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৩৪ জন। শিক্ষকের ১৪৮টি পদ ফাঁকা রেখেই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। একই অবস্থা কর্মচারী পদের ক্ষেত্রেও। ১৫৯টি পদের মধ্যে ৯৫টিই ফাঁকা। সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক ও জনবল দিয়ে কোনোরকম ক্লাস ও অন্যান্য কাজ চালানো হচ্ছে।

কারিগরির মূল পাঠ ব্যবহারিক হলেও একজন শিক্ষকের অনুপাতে ১০৩ জন শিক্ষার্থী হওয়ায় সেটি যথাযথ হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার ছাত্র হোস্টেলের দরজা-জানালা ভাঙা, বাথরুম নোংরা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষ পঞ্চম সেমিস্টারের একজন ছাত্রী এ বিষয়ে বলেন, এখানে চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক ল্যাব নেই। পুরোনো ল্যাব ও যন্ত্রপাতি দিয়েই কোনোরকম চলছে। ক্লাসও ঠিকমতো হয় না। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চললেও তা পর্যাপ্ত নয়।

শুধু ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নয়, দেশের প্রায় সব পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) নানা সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে প্রধান সংকট শিক্ষকের। বেশিরভাগ জায়গায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক এনে ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে তাদের দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে।

এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতও কাঙ্ক্ষিত নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হওয়ার কথা ছিল ১ : ১২। সেখানে এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১ : ৫০। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সেটি ১ : ১০০ ছাড়িয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ল্যাব সংকটও। পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে শিক্ষাদান চলছে।

অবকাঠামো সংকটের কারণে শ্রেণিকক্ষ সংকটও প্রকট। সে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে ল্যাবেও ক্লাস নিচ্ছে। কিন্তু সেখানে জায়গা সংকুলান হয় না। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থাও অপ্রতুল।

সরকারির চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থা বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা যায়, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক ও আধুনিক ল্যাব নেই।

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রধান চ্যালেঞ্জ দক্ষ প্রশিক্ষক এবং শিক্ষক পাওয়া। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষক রাতারাতি পাওয়া যাবে না। তাদের তৈরি করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার করতে হবে আমূল পরিবর্তন। কারিগরি শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে বাজেট বাড়ালে ভালো কিছু করা সম্ভব।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]