নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
জুমার নামাজের পর আমরা নববধূকে নিয়ে রওনা নেই। বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীতে পৌঁছার ১০ মিনিট পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তুফানে ট্রলারে পানি উঠতে থাকে। পানিতে ভরে যায় ট্রলারটি। আমরা চিৎকার দিতে থাকি। একপর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা ভাইসা উঠি। একেক জন একেক দিকে ভেসে যায়। আমার ছেলের দাদি শাশুড়ি আমাকে ধরতে চাইলে ডুব দিয়ে সরে যাই। উঠে দেখি আমার স্ত্রী ছোট ছেলে রাতুলকে তুলে দিয়ে বলে ‘বাচ্চাটা বাচাও’। আমি বাম হাত দিয়ে তাকে হাত ধরি। সাঁতরিয়ে ক্লান্ত হলে আমি বাচ্চার হাত ছেড়ে দেই। পরে দেখি রাতুল এক হাত দিয়ে আমার দাড়ি ও আরেক হাত দিয়ে জামার কলার ধরে আছে।
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন দেড় বছর বয়সী শিশু রাতুলের বাবা মনিরুল হাওলাদার। মনিরুল পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের মধ্য গুলি আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় জেলে।
জানা যায়, শুক্রবার বড় ছেলের বৌ নিয়ে নিজের মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে চর শাহজালাল থেকে ফিরছিলেন মনিরুলসহ স্বজনরা। ওই সময় হঠাৎ মাঝনদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঝড়ে নৌকায় থাকা ১৫ যাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১৫ যাত্রীর মধ্যে ১০ জন উদ্ধার হলেও তখন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সকালে বর ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনা নিখোঁজ রয়েছেন আরো দুজন। তবে উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন দেড় বছরের শিশু রাতুল।
মনিরুল হাওলাদার বলেন, জুমার নামাজের পর আমরা বেয়াই বাড়ি থেকে রওনা করি। আমরা বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীতে পৌঁছার ১০ মিনিট পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তুফানে ট্রলারের দুই পাশ দিয়ে পানি উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে ট্রলারটি পানিতে ভরে যায়। তখনও ট্রলারটি পুরোপুরি ডুবে নাই। আমরা চিৎকার দিতে থাকি। একপর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা ভাইসা উঠি। একেক জন একেক দিকে ভেসে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলের দাদি শাশুড়ি আমাকে ধরতে চাইলে আমি ডুব দিয়ে সরে যাই। উঠে দেখি আমার স্ত্রী রাতুল তুলে দিয়ে বলে ‘বাচ্চাটা বাচাও’। আমি বাম হাত দিয়ে তাকে হাত ধরি। একটু পর দেখি আমার স্ত্রী পাশে নেই। সাঁতরিয়ে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি বাচ্চার হাত ছেড়ে দেই। দুই হাত দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকি। রাতুল এক হাত দিয়ে আমার দাড়ি ও আরেক হাত দিয়ে জামার কলার ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর একটা নৌকা আইয়া আমারে ও আমার বাচ্চারে উদ্ধার করে। একে একে ১০ জনেরে উদ্ধার করছে তারা।
পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জানান, পটুয়াখালীর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছে বরিশাল থেকে আসা ডুবুরি দলের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল বিকেলে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ১৫ জন যাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এখনো আরো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।
Posted ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin