নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
মাত্র একযুগ আগেও দেশের উত্তরে প্রত্যন্ত জনপদগুলোতে যাতায়াত ছিলো কঠিন, দুর্গম। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সেখানে এখন শুধু যোগাযোগ অবকাঠামোই গড়ে উঠেনি, বদলে গেছে পিছিয়ে থাকা অনালোকিত ওই অঞ্চলগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম থেকে শুরু করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসহ জবাবদিহিমূলক নাগরিক সুবিধাও এখন সেখানে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। ব্যবধান ঘুচিয়ে দেশের সব জেলাই এখন সমান্তরালে অগ্রসরমান, সবখানে উন্নয়নের দুর্বার গতি।
আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে পিচঢালা গ্রামীণ সড়ক। যেমন মসৃণ, তেমন দৃষ্টিনন্দন যোগাযোগ ব্যবস্থাও মূলত এখনকার নিভৃত পল্লিগুলোর অভিন্ন বাস্তবতা।
উত্তরের প্রত্যন্ত জেলা ঠাকুরগাঁওতেও লেগেছে সামগ্রিক উন্নয়নের হাওয়া। যেন পাল্টে গেছে সব প্রেক্ষাপট। যুগের পর যুগ ধরে কৃষিপ্রধান অনালোকিত এ জনপদেও গড়ে ওঠেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
২০০৬ সালে এখানে বরাদ্দ দেয়া হতো মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বর্তমানে এ জেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়। সাধারণত এ জেলায় কমবেশি বিদ্যুতের চাহিদা ঘুরপাক খায় ১০৪ মেগাওয়াটের ঘরে। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে উঠা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিরই উৎপাদনক্ষমতা ১১৫ মেগাওয়াট। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যা বেশ কার্যকর বলে জানাচ্ছে মাঠ প্রশাসন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে জেলার আশীর্বাদ হিসেবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বললেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় এখন গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুতের কাজগুলোও করতে পারছে মানুষ। এতে উন্নয়ন হয়েছে আর্থ-সামাজিক।
বিদ্যুৎ শুধু ঘরই আলোকিত করছে না, কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের ফসলের মাঠে এখন সেচকাজ চলছে সৌর বিদ্যুতেও। কৃষকদের প্রণোদনা ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় জেলায় গেলো একযুগে ধানের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড়ের আদলে বেশকিছু জায়গায় শুরু হয়েছে চা চাষও।
উন্নয়নের গতি আছে রেল ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নেও। নবনির্মিত প্ল্যাটফর্ম আর স্টেশনে এখন প্রতিনিয়ত যাত্রীদের আনাগোনা থাকে এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায়।
পুরো সমাজই যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন শিক্ষার্থীরাইবা কেনো পিছিয়ে থাকবে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের উপকরণ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটান নিভৃত এলাকার শিক্ষার্থীরাও। প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের হাতেখড়ি নিয়ে নতুন প্রজন্ম এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোদ্ধা হয়ে উঠতে।
বদলে যাওয়া এমন গ্রামীণ পরিবেশ আর সড়ক অবকাঠামো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এখানকার অধিবাসীদের জীবনে। জেলাতে যেখানে একযুগ আগেও পাকা সড়ক ছিলো সাড়ে ৪০০শ কিলোমিটার, এখন তা উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ১২৫ কিলোমিটারে। ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্টে এককালের দুর্গম পথ এখন আনন্দময় যাত্রার সঙ্গী। অবস্থা এমনই যে, বিদ্যুৎচালিত অটোর কাছে মানুষচালিত ভ্যান হয়ে পড়েছে সেকেলে।
আশা করা হচ্ছে, সামগ্রিক উন্নয়নের এ ধারাতেই সব শ্রেণি, সব অঞ্চলের মানুষ হয়ে উঠবে দক্ষ মানবসম্পদ। ফলে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে দেশকে সমৃদ্ধির গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার পথ এখন শুধুই অগ্রসরমান।
Posted ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin