নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
‘খোরশেদের বয়স ২৮ হলেও শারীরিকভাবে দৈহিক উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। প্রথমে তার জন্য মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে মেয়ে পাই এবং বিয়েও দেই।’
কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউপির মধ্য বয়ড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী খোরশেদের মা খোদেজা বেগম।
গত শনিবার মহাধুমধামে বিয়ে সম্পন্ন হয় প্রতিবন্ধী যুবক খোরশেদ আলমের (২৮)। তার নিজের বাড়িতে হয় বৌভাত অনুষ্ঠান। জাঁকজমকপূর্ণ ওই বিয়েতে অতিথি ছিলো অন্তত ৫ শ’ জন। এর আগে শুক্রবার জেলা শহরের দিঘারপাড় মহল্লার বাচ্চু মিয়ার মেয়ে বর্ষা আক্তারকে বিয়ে করেন খোরশেদ।
খোরশেদের মা খোদেজা বেগম বলেন, মেয়ের বাবা গরিব, তাই পুরো বিয়ের খরচ আমরাই বহন করেছি।
খোরশেদ আলমের বাবা মোহন মিয়া বলেন, চার ছেলে-মেয়ে আমার। খোরশেদ জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অর্থাভাবে পঞ্চম শ্রেণির বেশি তাকে পড়াতে পারিনি। দারিদ্র্যতার কারণে এবং জীবিকার তাগিদে প্রায় ১৪ বছর আগে শহরের তিনআনী বাজার এলাকার একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেই।
স্থানীয় দুলাল গাজী, আনোয়ার মিয়া ও হেলালউদ্দীন বলেন, খোরশেদ প্রতিবন্ধী হয়েও পিছপা হয়নি। বেছে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তি। একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে এখন সে দক্ষ মিস্ত্রী হয়েছেন।
খোরশেদ জানান, প্রথমে কেউ তাকে কাজে না নিতে চাইলেও একপর্যায়ে শহরের তিনআনী বাজার মহল্লার আমিনুল ইসলামের গ্যারেজে কাজ পান। বর্তমানে সবাই দক্ষ মোটরসাইকেল মিস্ত্রী হিসেবে চিনে।
মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, খোরশেদকে প্রথমে কেউ কাজে না নিলেও আমি তাকে কাজে নিয়েছি। খুব অল্প সময়ে সে ভালো কাজ শিখে ফেলে। পরবর্তীতে তাকে অন্য গ্যারেজ মালিকরা ডাকলেও সে যায়নি। এই বলে যে, শুরুতে তাকে যারা প্রতিবন্ধী মনে করে অবহেলা করে কাজে নেয়নি। এখন সে কেন যাবে? তাই খোরশেদ ভালো অফার পেয়েও আমাকে ছেড়ে যায়নি। খোরশেদ শুধু কাজে নয়, ব্যবহারেও সবার কাছে খুবই প্রিয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুন্নাহার বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও যে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় তা খোরশেদ আলম সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি তার বিয়ের দাওয়াতে এসে দেখলাম প্রচুর মানুষ তার দাওয়াতে এসেছেন। মানুষ তাকে ভালোবাসে বলেই তার ডাকে সাড়া দিয়েছে।
Posted ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin