রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান রুনা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান রুনা

‘বাবা-মা দু’জনেই বয়স্ক ও অসুস্থ। আয় করার মত সংসারে এখন আর কেউ নেই। অভাবের সংসারের হাল ধরতে ইজিবাইক চালাচ্ছি। এ দিয়ে যা উপার্জন করি তা দিয়েই তিনবেলা অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধ, ছোট ভাই ও আমার খাবার জোগাড় করতে হয়।’ এভাবেই নিজের জীবনযাত্রার কথা বলছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌলী এলাকার বাসিন্দা রুনা আক্তার নামে এক তরুণী।

জানা যায়, অভাবের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারেননি রুনা। পৌরসভার পৌলি এলাকার আলতাফ-জহুরা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে রুনা চতুর্থ। ওই দম্পতির বড় ছেলে কয়েক বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকছেন। আরো দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে সৌদি আরবে যান রুনা কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় আবার দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। পরে বাধ্য হয়েই জীবন সংগ্রামের জন্য ইজিবাইক চালানো শুরু করেন তিনি।

রুনা আক্তার বলেন, আমার বাবা-মা অসুস্থ। তারা অনেক কষ্ট করে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনকে বড় করেছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই আলাদা থাকার কারণে আমার ওপর তাদের দায়িত্ব পড়েছে। আমার আরো একটা ছোট ভাই আছে। সেও কোনো কাজ করতে পারে না। আমি তো তাদের না খাইয়ে মেরে ফেলতে পারি না। যেহেতু পড়াশোনা করার সুযোগ পাইনি, তাই বাধ্য হয়েই ইজিবাইক চালাচ্ছি। প্রথমে সমাজের মানুষ নানাভাবে লাঞ্চনা করলেও এখন আর কেউ কিছু বলে না।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ভোরে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত চালাই। বাসায় এসে আবার কাজকর্ম করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ইজিবাইক চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তা থেকে পাঁচশ টাকা মালিককে দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে অসুস্থ বাবা-মার ওষুধসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। কোনো মতে চলে যাচ্ছে আমাদের চারজনের সংসার।

রুনার মা জহুরা বেগম বলেন, আমার বড় ছেলে আলাদা থাকে। আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখে না। দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই অসুস্থ। আমরা তো কিছুই করতে পারি না। আমার ছোট আরো এক ছেলে আছে। প্রতিদিন ওষুধসহ সংসারে অনেক টাকার প্রয়োজন। আয় করার মত কেউ নেই। তাই সংসারের হাল ধরার জন্য রুনা ইজিবাইক চালায়। অনেক ভয় হয় রুনার জন্য, তারপরও আমাদের কথা চিন্তা করে ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করে যাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কবির হোসেন বলেন, রুনা তার পরিবারের জন্য খুব পরিশ্রম করে সেটা আমাদের এলাকার অনেকেই জানেন। রুনা ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছে। পৌরসভা থেকে এর আগে ইজিবাইকের নম্বর প্লেট দেওয়ার সময় আমি ওর জন্য একটা নম্বর প্লেট বরাদ্দ করে দেই।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। রুনা মেয়ে হয়ে এমন কঠিন কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে তা একদিকে যেমন প্রশংসার দাবিদার অন্যদিকে কষ্টকরও বটে। রুনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার জন্য আমাদের যতটুকু করণীয় আমরা চেষ্টা করব।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]