শনিবার ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে পানি ভাঙছে ঘরবাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

বাড়ছে পানি ভাঙছে ঘরবাড়ি

টাঙ্গাইলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিনটি নদীর পানি। আরো দুটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এরমধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি।

এদিকে, পানি বৃদ্ধি ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে কালিহাতীর নিউ ধলেশ্বরীর দুই তীরের কুর্শাবেনু, গোবিন্দপুর, কদিমহামজানী, চরহামজানী, দশকিয়া, সল্লা, হাতিয়া, আনালিয়াবাড়ী, টুনিমগড়া, ধলাটেঙ্গর, কুড়িঘরিয়া, চরভাবলা, হিজুলী, এলেঙ্গা, বাশী এবং যমুনার বাম তীরে ভূঞাপুরে কষ্টাপাড়া, পাটিতাপাড়া, গোবিন্দাসী, খানুরবাড়ী, জিগাতলা, কুঠিবয়ড়া প্রভৃতি গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও ফসলি জমি ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে পাঁচ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার আর ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সূত্র জানায়, এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশ চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে মাটিভরাটের প্রয়োজন হয়। ওই সড়কে মাটি দেওয়ার শর্তে জেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর ৯টি স্থান থেকে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ড্রেজার দিয়ে মাটি-বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে নিউ ধলেশ্বরী নদীর চরভাবলায় দুইটি পয়েন্টে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স বিপুল এন্টারপ্রাইজকে এক দশমিক ০৮ কিলোমিটার, আনালিয়াবাড়ীর ৩টি পয়েন্টে রিফাত এন্টারপ্রাইজ ও অ্যামনেস্টার লিমিটেডকে ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, সল্লার দুইটি পয়েন্টে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স তুষার এন্টারপ্রাইজকে এক দশমিক ২০ কিলোমিটার এবং রিফাত এন্টারপ্রাইজকে জোকারচর ও গুদারা ঘাট দুইটি পয়েন্টে এক দশমিক ৪৫ কিলোমিটার নদী খননের অনুমতি দেওয়া হয়।

জিওব্যাগ ফেলা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম বলেন, জিওব্যাগ ধসে ভাঙন দেখা দেওয়ায় নতুন করে গুদারা ঘাট এলাকার ১৫০ মিটার ও কদিমহামজানী এলাকার ৬০ মিটার অংশে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিউ ধলেশ্বরী নদীর বাম তীরে আনালিয়াবাড়ী ও ধলাটেঙ্গর গ্রামের হবিবর রহমান (হবি), আ. হালিম, গৃহবধূ ছবিরন বেগম, সাবিনা আক্তার, মোছা. রিনা বেগম, মো. লিয়াকত আলী ও সুনীল হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দুই তীরেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, নিউ ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাউবো নির্মিত সল্লা-হাতিয়া নদীরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি যাতে কেউ কেটে দিতে না পারে সেজন্য সল্লা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশরা পালা করে পাহাড়া দিচ্ছেন। দশকিয়া ইউনিয়নের বালিয়াচরা-পটল বাজার গ্রাম্য রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গাপুর ইউনিয়নের চর দুর্গাপুর, বেরীপটল, ভৈরববাড়ী, বেলটিয়া ও আলিপুর গ্রামে পানি ঢুকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

নিউ ধলেশ্বরী নদীর অফটেক (নদীমুখ) থেকে পুংলি পর্যন্ত দেখভালকারী পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মজনু মিয়া বলেন, গুদারা ঘাট ও কদিমহামজানীতে ভাঙনরোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আনালিয়াবাড়ী ও ধলাটেঙ্গর এলাকায়ও ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা হবে।

সল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম বলেন, সল্লা-হাতিয়া বাঁধ প্রায় প্রতি বছরই কে বা কারা রাতের আঁধারে কেটে দেয়। এবারো যাতে বাঁধ কাটতে না পারে সেজন্য গ্রাম পুলিশ দিয়ে পালা করে দিনরাত পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দশকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ভূঁইয়া বলেন, নিউ ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। আমন বীজতলাও তলিয়ে গেছে।

চারলেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রবিউল আউয়াল জানান, প্রকল্পে প্রচুর বালু-মাটির প্রয়োজন হওয়ায় জেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে তারা নিউ ধলেশ্বরী নদীর ৯টি স্থানে খনন করে বালু-মাটির সংস্থান করছেন। সেখানে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলন করে প্রকল্পে সরবরাহ করছে। অন্য কারো কাছে উত্তোলিত বালু বিক্রি করার অধিকার তাদের নেই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:১২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]