রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেইশে ‘বাংলাদেশ সেরা’ শান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

সময় এখন শান্তর। তার ব্যাট কাঁদলে একটা সময় ট্রল হতো। আর এখন তার ব্যাট হাসলে হাসে বাংলাদেশ। এখন আর কেউ শান্তকে নিয়ে রসিকতা করে না, কেউ লর্ড বলে খোঁচাও মারে না। সেই মুখগুলোতে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন শান্ত নিজেই।

২০২৩ সালে নতুন এক শান্তর আবির্ভাব হয়েছে। যা কিনা বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। তাইতো কেউ এখন শান্তকে বাদ দেওয়ার দোয়া করেন না। উল্টো আক্ষেপ করে বলেন ইশ! যদি শান্তর মতো আরেকজন থাকতো।

বছরখানেক আগেও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ট্রল হতো। এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজলে সেই ট্রলগুলো পাওয়া যাবে। দলে নিয়মিত জায়গা পেতেন না। পেলেও রান করতে পারতেন না। এরপর তো তার মুন্ডুপাত।

কত রসিকতা, কত গালমন্দ! সব সয়ে নিজেকে নতুন করে তৈরি করার পণ করেন শান্ত। ২০২৩ সালের নতুন সূর্যকে সাক্ষী রেখে হয়তো শপথও করেন। অতীতের সব কালিমা মুছে নব উদ্যোমে আলো ছড়াবেন। সেজন্য শুরু হয় শান্তর নয়া মিশন।

দিনরাত পরিশ্রম করে যান। ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনগুলোতেও ঘাম ঝরান। মন দিয়ে ব্যাটিং অধ্যায়ের সব খুঁটিনাটি ঠোটস্ত করে ফেলেন। যাতে পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন হলেও উত্তরটা দিয়ে আসা যায়। অন্তত যারা তাকে হাসিরপাত্র ভেবেছিলেন তাদের মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া যায়। ব্যাট হাতে উচিত একটা জবাব দেওয়া যায়। ২৩ সালে এসে শান্ত ঠিকই পেয়ে যান সেই ঝলমলে পথটা। যে পথ হয়ে এখন আসছে কেবল প্রশংসা আর প্রশংসা।

এইতো গেলো রোববার এশিয়া কাপে বাংলাদেশের টিকে থাকার ম্যাচে শান্ত হয়ে যান ত্রাতা। তার দেখানো পথে চলে সাফল্য পান মেহেদী হাসান মিরাজও। দুজন মিলে আফগানিস্তানের মতো ভয়ংকর বোলিং আক্রমণকে করে দেন ছন্নছাড়া। রান আউটে কাটা না পড়লে এই শান্তকে শান্ত করা যে দুরুহ হয়ে যেতো সেটা ঠিকই টের পায় আফগান বোলাররা।

শান্তর এমন ধারাবাহিকতায় মুগ্ধ বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরাও। যারা এতদিন তাকে নিয়ে রসিকতা করতেন তারাও এবার করতালি দিয়ে তাকে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করবেন। কারণ সময়টা এখন শান্তর। ২০২৩ সালে কেবল ওয়ানডে নয় ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই চলছে তার রাজত্ব। যেটা আর কোনো বাংলাদেশি পায়নি।

ওয়ানডে, টি২০ ও টেস্ট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান এই শান্তর। পরিসংখ্যান বলছে, সবমিলিয়ে ১০৭৮ রান করেছেন এই টাইগার ব্যাটার। গড় ৪৯। আর এই পথে তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন চারটি, হাফসেঞ্চুরি করেছেন পাঁচটি। বুঝতেই পারছেন কতটা সুখের সময় পার করছেন শান্ত।
এই তালিকায় দুইয়ে আছেন লিটন দাস। এ বছরের শুরু থেকে আজ অবধি তিন ফরম্যাট মিলিয়ে লিটন করেছেন ৭২৪ রান। শান্তর সঙ্গে তফাৎ কিন্তু কম নয়। লিটনের ব্যাটিং গড়ও শান্তর চেয়ে কম। করেননি কোনো সেঞ্চুরি আর হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ছয়বার।

তিন নম্বরে থাকা মুশফিকুর রহিমের রান ৭১৬। লিটনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন মুশি। আর চার নম্বরে আছেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে তিনি যতটা না সফল হয়েছেন এই সময়ে ব্যাট হাতে ততটা রঙ ছড়াতে পারেননি। তার মোট রান মোটে ৬৩৯। এরপর ক্রমান্বয়ে পাঁচ ও ছয় নম্বর আাসনটি তাওহীদ হৃদয় এবং মেহেদী হাসান মিরাজের দখলে।

আসলে শান্তর অশান্ত রুপটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলের। কারণ তার ব্যাট অশান্ত থাকলেই রানের চাকা ঘোরে দ্রুত। এশিয়া কাপে এই যাত্রায় শান্ত হয়েছিলেন কান্ডারী। সামনে আরো কঠিন পথ। কঠিন পরীক্ষা।

সেখানেও সবাই নতুন শান্তকে খুঁজবে, তার পানে চেয়ে থাকবে গোটা বাংলাদেশ। হয়তো এর চেয়েও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে, হয়তো এর চেয়েও দারুণ দিন সামনে আসছে। সেই আশায় সেই স্বপ্ন নিয়ে বসে এ দেশের লাখো কোটি মানুষ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:১০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]