শনিবার ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদের ৫২তম শাহাদতবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদের ৫২তম শাহাদতবার্ষিকী আজ

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫২তম শাহাদতবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর)। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ দিনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন এ বীর যোদ্ধা। ওই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ এবং দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ শেখ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমান নাম নূর মোহাম্মদ নগর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা, মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ’র জন্মস্থান মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। এরপর উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যায় নূর মোহাম্মদ নগর। তার স্মৃতিরক্ষার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ এবং স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়।

জানা গেছে, ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন নূর মোহাম্মদ শেখ। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তিন সঙ্গীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করার অনন্য নজির স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে।

যেভাবে শহীদ হন তিনি-

১৯৭১-এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যূহের সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তার ডান কাঁধে যাতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

শত্রুর গোলায় ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন নূর মোহাম্মদ শেখ। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না ওরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণ। ওই রাইফেল চালিয়ে দিয়ে শত্রুসৈন্যের অগ্রসারতা ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তার দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন এ মানসে। অন্য সঙ্গীরা অনুরোধ করলেন তাদের সাথে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাকে রেখে চলে যেতে।

শেষ পর্যন্ত তার আদেশ অনুসরণ করে তাকে রেখেই নিরাপদে সরে যেতে পারলেন সহযোদ্ধারা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) যাঁর সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী বীর যোদ্ধাকে বেয়নেট চার্জ করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে এবং মস্তক বিদীর্ন করে ঘিলু ছড়িয়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।

নূর মোহাম্মদ যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেন। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে দাফন করা হয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]