নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
পা দু’টো অকেজো। চলাচল করতে হয় হামাগুড়ি দিয়ে। তাতে কী? স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। তাইতো তিন কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে পড়াশুনা করছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়ার ইছাইল নতুনবাজার ফরাজিবাড়ি এলাকার গাছ কাটা শ্রমিক লাল মিয়ার ছেলে ফজলুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জন্ম থেকেই ফজলুল হকের দুই পাটি অকেজো। শৈশব থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল তার। ফলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও থমকে যাননি ফজলুল। অভাব অনটনের মধ্যেও কখনো অটোরিকশায় চড়ে আবার কখনো হাতে স্যান্ডেল পরে হামাগুড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করেছেন। এখন পড়ালেখা করছেন দ্বাদশ শ্রেণিতে।
ফজলুল হকের বাবা লাল মিয়া বলেন, আমার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ফজলুল। মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছি। এক ছেলে হোটেলে কাজ করে। অপর তিন ছেলে ছোট। তারা বাড়িতেই থাকে। জন্মের সময় ফজলুলের দুই পা সামনের দিকে বাঁকা ছিল। বয়স তিন মাস হলে ফজলুলকে একাধিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু পা সোজা হবে না জানান চিকিৎসকরা। এরপর ধীরে ধীরে এভাবেই বেড়ে উঠেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার প্রতিদিনের আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাই। আমার কষ্টের কথা চিন্তা করে ফজলুল অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর থেকে টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে ফজলুল হক বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করতে চাই। এজন্য এত কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। টিউশনি করে খরচ জোগাচ্ছি। পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে চাই। সৎ থেকে মানুষের উপকার করতে চাই।
ফজলুল পড়ালেখা করছেন হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন বলেন, পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তবে পরিপূর্ণ যত্ন ও আর্থিক সমস্যার কারণে বহু শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবনের মোড় ঘুরিয়ে সফলতা দূরের কথা, সামান্য পড়াশোনাও করতে পারেননি। এক্ষেত্রে থমকে যায়নি হামাগুড়ি দিয়ে চলা ফজলুল। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টার কমতি নেই তার।
তিনি আরো বলেন, ফজলুল নিয়মিত কলেজে আসে। তার ইচ্ছা আছে বলেই এত দূর থেকে এখানে কষ্ট করে পড়তে আসে। আমরা ফজলুলের কাছ থেকে বেতন ও পরীক্ষার ফি নিই না। এখান থেকে সে যখন বের হবে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে প্রতিবন্ধী কোটা থাকে, সেটার জন্য চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ফজলুলের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
Posted ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin