শনিবার ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলচ্চিত্রে যুগে যুগে দেবদাস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

চলচ্চিত্রে যুগে যুগে দেবদাস

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান তিন দেশে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘দেবদাস’ নিয়ে ১১টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মূল বিষয়বস্তুর ঠিক রেখে তিন দেশের পরিচালকই ‘দেবদাস’কে নতুন রঙে এঁকেছেন।

সাহিত্যের আবেদন কালজয়ী। সময়ের কোন সুতোয়ই তা বাঁধা যায় না। আমাদের বাংলা সাহিত্যের মাঝে মানুষ বরাবরই খুঁজে পেয়েছে তার স্বপ্ন, সম্ভাবনা, ভালো লাগাময় নানা আবেগ ও অনুভূতির জীবনছবি। সাহিত্যের রঙ আমাদের জীবনের প্রতিটি ভাঁজে মিশে আছে। বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি খ্যাতিমান কথাশিল্পী শরৎ চন্দ্রচট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ দুই বাংলার অসংখ্য মানুষের হৃদয়ের কষ্ট ছোঁয়া আকুতিকে প্রকাশ করেছে ভিন্নভাবে। বাংলা সাহিত্যের কালোত্তীর্ণ প্রেমের উপন্যাস হিসেবে ‘দেবদাস’ এখনো সবার কাছে সমান আবেদন নিয়ে হাজির হয়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দেবদাসের অপ্রত্যাশিত প্রায়াণই বোধকরি ‘দেবদাস’ উপন্যাসকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। দেবদাসের প্রতি মানুষের প্রচণ্ড ভালোবাসা, এ উপন্যাস পড়ার সময় প্রতিটি মানুষের দেবদাস, চন্দ্রমুখী ও পার্বতী হয়ে ওঠার ভালোলাগা এবং বিরহ বেদনাকে উপজীব্য করে যুগ যুগ ধরে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র।

তবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুই বাংলার জনপ্রিয় বাংলা লেখক হলেও তার ‘দেবদাস’ নিয়ে প্রথম ছবি নির্মিত হয় ১৯২৮ সালে। এটা ছিল তামিল ভাষায়, ছবিটি পরিচালনা করেন নরেশ মিত্র।

১৯৩৫ সালে অভিনেতা প্রযোজক পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়া দেবদাস নির্মাণ করেন। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি এ ছবিতে ‘দেবদাস’ এর ভূমিকায় অভিনয়ও করেন। এর পর দু’বছর প্রমথেশ বড়ুয়া আবার দেবদাস নিয়ে চলচ্চিত্রে নির্মাণ করেন। ১৯৩৬ সালে নির্মিত ‘দেবদাস’ এর ‘দেবদাস’ এর ভূমিকা অভিনয় করে কে এল সায়গল এতই সফলতা পেয়েছিলেন যে পরবর্তী সময়ে দেবদাস নামের নদীতে ডুবে যায় তার আসল নামের তরী। ১৯৫৩ সালে তেলেগু ভাষায় দেবদাস নির্মাণ করেন ভেদান্তম রাগাভাইশ। তেলেগু ছবির দর্শকরা ওই ছবির নাম দেবদাসের পরিবর্তে ‘দেবদাস্যু’ উচ্চারণ করেন। মূলত দেবদাস স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে ১৯৫৫ সালে। সেসময় ভারতের আকাশ বাতাস ভারী করে তোলে দেবদাস।

ঐ বছর হিন্দি ভাষায় নির্মিত ‘দেবদাস’ ভারতের সব বিখ্যাত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এ ছবিটি পরিচালনা করেন বিমল রায়। এতে দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করেন তৎকালীন হিন্দী সিনেমার বরপুত্র দিলীপ কুমার এবং পার্বতী চরিত্রে রূপদান করেন বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাজ্ঞী সুচিত্রা সেন। বৈজয়ন্তীমালা অভিনয় করেন চন্দ্রমুখী চরিত্রে। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানে ‘দেবদাস’ ছবি নির্মিত হয়। এটি পরিচালনা করে সরফরাজ। ১৯৭৯ সালে আবার কলকাতায় ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেন দীলিপ রায়। তখন উত্তম-সুচিত্রা ক্যারিয়ার শেষের দিকে ছিল বলে লাইমলাইটে থাকা সৌমিত্রকে দেবদাস, সুমিত্রা মুখার্জিকে পার্বতী, সুপ্রিয়া চৌধুরীকে চন্দ্রমুখী এবং উত্তম কুমারকে চুনিলাল চরিত্রে কাস্ট করা হয়। দীলিপ কুমার অভিনীত হিন্দি দেবদাসের দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর এ ছবিটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়। ঐ বছরই বাংলাদেশের কয়েকজন তরুণ প্রযোজকের ‘দেবদাস’ নির্মাণের উদ্যোগে শামিল হন ‘ওরা এগার জন’ ছবি খ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। কিছুটা কাঠখড় পুড়িয়ে চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৮২ সালে তার ‘দেবদাস’ নির্মাণ শেষ করেন।

এ ছবিতে দেবদাসের চরিত্রে অভিনয় করেন চির সবুজ নায়ক বুলবুল আহমেদ, চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় আনোয়ারা এবং চুনিলালের সাজে নায়করাজ রাজ্জাক।

চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ মুক্তির পরই দুই বাংলায় আমাদের ‘দেবদাস’ নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীসহ সিনেমা বোদ্ধামহলে প্রশংসার ঝড় বয়ে যায়।

২০০২ সালে শক্তি সামন্তের পরিচালনায় কলকাতায় নির্মিত ‘দেবদাস’ তেমন আলোচনায় আসতে পারেনি। তবে একই বছর হিন্দি ভাষায় নির্মিত ‘দেবদাস’ নিয়ে এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়। এবার শত কোটি টাকা ব্যয়ে শাহরুখ, ঐশ্বরিয়া রায় এবং মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেন সঞ্জয় লীলা বানসালী। বড় বড় তারকা ও বিশাল বাজেটের এই ‘দেবদাস’ দেখে দর্শকদের প্রত্যশার খানিকটা অপূর্ণই রয়ে গেছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]