নিজস্ব প্রতিবেদক: | বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
ভারতের উত্তর সিকিমে ভয়াবহ বন্যা ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশ অংশেও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৯০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ভারতের উত্তর সিকিমের চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.০৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার প্রভার পড়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এই উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী কিছু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এর আগে বুধবার থেকে জনসাধারণের সতর্ক করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনভর মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। তিস্তা নদীবেষ্টিত চর ও নিচু অঞ্চলের মানুষকে দ্রুত উঁচু স্থানে সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, পাড়া সাদুয়া, কানিচরিতা বাড়ি, রাঘব, কারেন্ট বাজার, বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদর, কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর, কাজিয়ারচর, পোড়ার চর, কেরানির চর, রাজার চর, মিন্টু মিয়ার চরসহ তারাপুর, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নদীর তীরবর্তী লোকজন জানান, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বিপদের মধ্যে পড়ে গেছেন। অনেক কষ্ট করে জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল লাগিয়েছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ঐ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
উপজেলার চরচরিতা বাড়ি গ্রামের মিন্টু মিয়া বলেন, হঠাৎ করে গতকাল বিকেল থেকে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এই চরের বেশ কিছু নিচু এলাকা ডুবে গেছে। দু’একদিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ ইউএনও তরীকুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে পানি আসার খবরে উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বরসহ সচেতনমহল, সুধিজন ও প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটকে নিয়ে জরুরি মিটিং করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে সকাল থেকেই মাইকিং করা হয়েছে। সর্ব সাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগে নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চারজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা কন্ট্রল রুম চালু করা হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করা হলে, তাৎক্ষণিক সবধরনের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার (এনডিসি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) জুয়েল মিয়া বলেন, পানিবন্দি মানুষদের সেবা দিতে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ফ্ল্যাট শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য আধুনিক চারটি রেসকিউ বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। বন্যাকালীন মানুষদের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শিশু খাদ্যসহ খাদ্য সহায়তা এবং বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Posted ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin