শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্র্যান্ড বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট

ব্র্যান্ড বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চামড়ার জুতো ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের ব্যবসায়ীদের এ খাতের জন্য ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের ঘোষণার পাশাপাশি ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ব্যবসায়ীদের আরো মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পণ্য আমাদের নিজের নামে বাজারজাত করা হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়ুক। আমি চাই বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হোক, বড় হোক।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪র্থ বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো (ব্লিস)-২০২৩ উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি অনেক দেশের অনেক পণ্য তারা এখান থেকে তৈরি করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশে ফিনিশিং দিয়ে নিজেদের নামে বাজারজাত করে। সেক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও নিজেদের কিছু কিছু ব্রান্ড তৈরি করতে পারি কিনা ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’ হিসেবে আমার মনে হয় সেদিকেও নজর দিলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের কাছ থেকে সবধরনের সহযোগিতা পাবেন।

তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের পণ্য আমাদের নামে বাজারজাত হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়ুক। দেশের নাম সুন্দর হোক, বৃদ্ধি পাক। কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের এই টানা তিন মেয়াদে তার সরকার অনেক খাতে অনেক সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের রফতানিকারকদের উচ্চ মূল্য সংযোজন করে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের ও ক্রেতাদের ক্রয় আদেশ সম্পাদন সক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সুউচ্চ গুণগতমান সম্পূর্ণ বৈচিত্রময় পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাংলাদেশ করছে।

তিনি বলেন, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্রের হার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে এবং আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষই এখন পণ্য ক্রয় করে। অতীতে যেখানে মানুষের পায়ে একটি রবারের চপ্পলও ছিল না এখন কিন্তু সেটা আর দেখা যায় না। পাশাপাশি, সরকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করে দেওয়ায় এখন আর কাদামাটি ঠেলেও বেশি চলতে হয় না।

তিনি আরো বলেন, এবারের ব্লিস-এর থিম ‘পসেবল ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশেও সম্ভব)’ সাম্প্রতি বছরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়নমূলক রূপান্তর ঘটেছে তা এতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এজন্য উদ্যোক্তদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জোনাথন ববেট এবং গোল্ডেন চ্যাং গ্রুপের বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাতা জেমস হো।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনসন সিটি বসুন্ধরায় ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ব্লিস এর শেষ তিনটি প্রদর্শনী ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উদ্যোক্তারা জানান, ব্লিস-২০২৩ ক্রেতা, ব্র্যান্ড এবং সোর্সিং প্রতিনিধিদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে যা বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের শীর্ষ-স্তরের নির্মাতা এবং রফতানিকারক, পাদুকা প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে এবং বর্তমান বিনিয়োগের সুযোগ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কার্যকর নেটওয়ার্কিং, ব্যবসায়িক উন্নয়নের সুবিধা দেবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে চামড়া শিল্পে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রথমত, বাণিজ্যিক খামার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং গবাদি পশু পালনে বিপ্লব ঘটেছে, যার ফলে দেশ কোরবানির মৌসুমেও গবাদি পশুর চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বছরে ২.৫ মিলিয়ন গবাদি পশু উৎপাদিত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, মাত্র এক দশক আগে দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসত কাঁচামাল হিসেবে চামড়া রফতানি থেকে, কিন্তু সরকারের প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তায় উচ্চমূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদন যেমন পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের সম্প্রসারণ হয়েছে।

এখন এ খাতের রফতানি আয়ের প্রায় ৯৩ শতাংশ আসছে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।

তৃতীয়ত, হাজারীবাগের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে আমাদের সরকারই সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিপূর্ণভাবে সাভারে আধুনিক শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন তথা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) ও সাসটেইনবল লেদার ফাউন্ডেশন (এসএলএফ) ইত্যাদি অর্জন উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে এ ক্ষেত্রে, যেহেতু বেপজা কর্তৃপক্ষের একটি বিশ্বমানের ইটিপি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (যেমন বেপজা) অধীনে একটি ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি পৃথক ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করে দেওয়া হবে। যেন এই খাতের ছোটখাট নানা সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। এই খাতের সমস্যা সমাধানে এবং কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে অঞ্চলভিত্তিক অত্যাধুনিক কসাইখানা প্রতিষ্ঠা এবং ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা তার সরকারের রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকার সাভারের পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর নাম উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এরই মধ্যে চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ ও চামড়া খাতের রফতানি রূপরেখা ২০২২ প্রণয়ন করেছি।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের ক্রমবর্ধমান সরবরাহের পুরোটাই ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরি করে রফতানি করতে পারলে আমরা অনায়াসে ২০২৫ সালের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত থেকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জন সম্ভব হবে। তবে, এক্ষেত্রে পণ্য রফতানিতে বৈচিত্র আনয়নের এবং রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধিতের প্রতিও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, আমি চাই, ২০৩০ সাল নাগাদ এ খাত থেকে সামগ্রিক রফতানি আয় যেন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এজন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের দৃষ্টিও আকর্ষণ করে তার ওপর দায়িত্ব দিয়ে তিনি বলেন, একটু ধাক্কা না দিলে কাজ হয় না, সে ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি আমি।

এ বিষয়ে অতি সত্বর, সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। যার মধ্যে রয়েছে- সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর বর্ধিত প্রকল্পে কম্পোজিট চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তোলার জন্য অন্তত ১৫০ একর জায়গা বরাদ্দ থাকবে। এখানে এলএফএমইএবি-র সদস্যদের বিনিয়োগের জন্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে স্পিড টু মার্কেট নিয়ে কাজ শুরু করেছি। রফতানির লিড টাইম ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ও সেবা আরো সহজ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি কারকগণের স্টকহোল্ডিং-এর জন্য কমন বন্ডেড ওয়্যার হাউজ পদ্ধতি প্রবর্তন। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও বন্ড সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আমদানি সহজ, আমদানি ব্যয় হ্রাস ও লিড টাইম কমে আসবে।

এ সময় আমাদের প্রচলিত লাল ফিতার ধারণার অবসান হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গতিশীলতা আসবে এবং দেশ আরো উন্নত হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহারের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা বস্তাবায়নও দ্রুত করতে হবে। একটু আটকে রাখলে বা টাইট দিলে ভালো হয় কেউ কেউ মনে করেন। আসলে সবসময় তা ভালো হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত, দ্রুত বাস্তবায়ন-এই নীতিতেই আমি বিশ্বাসী। কাজের ক্ষেত্রে এই লাল ফিতার দৌরাত্ম যেন আর না থাকে। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও আমি বলবো, একটু আন্তরিক হলেই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা যেতে পারে। কারণ, নষ্ট করার মত সময় নেই, ‘টাইম ইজ টু সর্ট’। সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে তেমনি দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:৩২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]