শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানেলের নজরদারিতে ১১০ সিসিটিভি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হচ্ছে আজ (শনিবার)। কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই সবার জন্য উন্মুক্ত হবে স্বপ্নের এ টানেল। টানেলের নিরাপত্তায় লাগানো হয়েছে অত্যাধুনিক ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেন্টার।

যেখান থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো টানেলে নজরদারি চালানো হবে। টানেলের প্রতিটি টিউবে রয়েছে লম্বা একটি হিট সেন্সর।

যেখানে অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো কারণে তাপ লাগা মাত্র অটোমেটিক সিসিটিভি ক্যামেরা ঘটনাস্থলের দিকে ঘুরে যাবে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা হলে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি চালানো হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) আগামী ৫ বছর টানেলের যাবতীয় বিষয় দেখাশুনা করবেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তাদের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। টানেলের ভেতরে কোনো সমস্যা হলে কতৃপক্ষের নির্দেশনায় সেই টিম ছুটে যাবে। তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশ নিরাপত্তার কাজ করবে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে যানবাহন চলাচল নিয়ে। অগ্নি দুর্ঘটনায় ঠেকাতে টানেলের দুই প্রান্তে স্থাপন করা হচ্ছে প্রথম শ্রেণির দুটি ফায়ার স্টেশন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) স্থাপনা বিবেচনায় নিরাপত্তায় থাকবে টানেল। টানেলের প্রবেশমুখে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার। উদ্বোধনের আগেই দুই প্রান্তে দুটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শেষ হবে। এছাড়া এই বাকি দুটি উদ্বোধনের পর দ্রুত স্থাপনের কাজ শুরু হবে। স্ক্যানার দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলোতে চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী বাস, কার, মাইক্রোবাস অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে যানবাহনের নিচের অংশে বিস্ফোরকজাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।

টানেলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, টানেলের সিকিউরিটি দুই ধরনের। যেমন কোথাও গাড়ি নষ্ট হল সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে বিষয়টি অবহিত হবে। সঙ্গে সঙ্গে একটি টিম দিয়ে গাড়িটি সরানো হবে। এগুলো অপারেশন এবং মেইনটেইনসের কাজ। এছাড়া টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটা দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে, ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে। আর পুলিশের কাছ হচ্ছে বাইরে থেকে ভেতরে গিয়ে যাতে কেউ নাশকতা না করে।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা জানান, নিরাপত্তার জন্য টানেলের দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও ফাঁড়ি নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আপাতত পতেঙ্গা থানা এবং কর্ণফুলী থানা পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে। ফাঁড়ির কাজ শেষ হলে সেখানে ফোর্স পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কে-৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে।

এদিকে টানেলের দুই প্রান্তে একজন করে সার্জেন্ট এবং ৩ জন করে কনস্টেবল থাকবেন। ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার ডিউটি বদল হবে। এ হিসেবে দৈনিক ৬ জন সার্জেন্ট এবং ১৮ জন কনস্টেবল কাজ করবেন। আপাতত এভাবে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর যানবাহন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে সিএমপির বন্দর জোনের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের পর শুরুতে দর্শনার্থীদের চাপ থাকবে। এক্ষেত্রে কিছু যানবাহন আনোয়ারা দিয়ে ঢুকে পতেঙ্গা হয়ে পুনরায় আনোয়ারা ফিরে যাবে। কিছু যানবাহন পতেঙ্গা দিয়ে টানেলে ঢুকে আবার আনোয়ারা হয়ে পতেঙ্গা ফিরে আসবে। উদ্বোধনের পর যানবাহনের চাপ থাকবে বিবেচনায় এগুচ্ছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শনিবার (২৮ অক্টোবর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইদিন চট্টগ্রামের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত কর্ণফুলী উপজেলায় জনসভায় যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে।

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়। ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]