সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাই নীরব। সাংবাদিকদের ওপর হামলা হলেই বুঝতে হবে হামলাকারীদের দুরভিসন্ধি রয়েছে। নিজেদের সুরক্ষার পক্ষে সোচ্চার না হলে হত্যা ও নির্যাতন ঘটতেই থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশ মাত্র দু’জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। আর একটিরও বিচার হয় নাই। সাংবাদিকরা এ সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত মানুষ। তাই সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে সাংবাদিকদের ওপর হামলা জ্বালাও পোড়াও, পুলিশ হত্যা এবং প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি-মার্কিনি বর্বরতায় নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ গণহত্যার’ প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
সভায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জন্মগতভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে, এটা নতুন নয়। গত নির্বাচনে তাদের ইশতেহারে গণমাধ্যম সম্পর্কে কিছুই ছিল না। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সুরক্ষার পক্ষে সোচ্চার না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আজকে আওয়ামী লীগ মারবে, কাল বিএনপি মারবে।তিনি আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৩০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। এর কারণ কোনোদিন সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের বিচার হয়নি। রফিক ভূঁইয়ার (সাংবাদিক) মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসার চেষ্টা করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে। নতুবা এমন হামলা চলতে থাকবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ২৮ অক্টোবরের হামলা এবং ফিলিস্তিনের হামলার মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। ইসরায়েলের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ৩২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাই নীরব, বিদেশি দূতাবাসগুলোও নীরব। সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো গণতন্ত্রকে নিজেদের সুবিধার্থে নিজেদের মতো ব্যবহার করে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা হলেই বুঝতে হবে হামলাকারীদের দুরভিসন্ধি রয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে একজন প্রবীণ সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া মারা গেছেন। প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক মারাত্মক জখমের শিকার হয়েছেন। এগুলো পরিকল্পিত হামলা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে, হাসপাতালে আগুন দেওয়া হয়েছে, এগুলো খুবই বর্বর ঘটনা। সভায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির এক দফা কর্মসূচির সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে আহত দুই সাংবাদিক বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন, সংবাদ সংস্থা ফোকাস বাংলার জেষ্ঠ্য আলোকচিত্রী মোস্তাফা কামাল এবং ডিজিটাল খবরের আলোকচিত্রী মেহেদী হাসান।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের কো-চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেষ্ঠ্য সাংবাদিক কামাল চৌধুরী, সাংবাদিক শেখ মামুন হোসেন, ডিইউজে সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম প্রমুখ।