নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
আজ ৩ নভেম্বর; বাঙালি জাতির জীবনে শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় ১৯৭৫ সালের এই দিনে তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও প্রথম অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলীকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছিল, সেই বিপথগামী সেনাসদস্যদের একটি গ্রুপ এই চার নেতাকে ঢাকার তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে (বর্তমানে জাদুঘর) ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকাবস্থায় এমন হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে চার জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলার আসামিদের বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ খুনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। অন্যদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই রাষ্ট্রপক্ষের কাছে। পলাতক থাকা এ দুই মামলার আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরে ২০১০ সালের ২৮ মার্চ এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সরকার; যার নেতৃত্বে রয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যা মামলার আসামিরা একই। কয়েকজন খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। যারা পলাতক, তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। আমরা তাদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। অগ্রগতি হলে জানানো হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী খন্দকার মোশতাক। পরে সে রাষ্ট্রপতি হয়। খুনিচক্র মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং মুক্তিযুদ্ধের ওই চার সংগঠক বেঁচে থাকলে তাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ কারণেই জাতীয় চার নেতাকে ঢাকার তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর কলঙ্কিত এ হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর জেলহত্যা মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায়ে আসামি তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
Posted ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin