নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট গঠন সম্ভব। কিন্তু ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে না। গবেষণা সংস্থা আয়োজিত ঢাকায় দু’দিনের দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সম্মেলনের শেষ দিনে এক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান এমন মত দিয়েছেন।
এদিকে সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সার্ক গঠিত হলেও বাস্তবে তা অকার্যকর।
দক্ষিণ এশিয়ায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব বিষয়ে অধিবেশনে রওনক জাহান আরও বলেন, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, তাদের নিরাপত্তার উদ্বেগ এবং ছোট দেশগুলোর প্রতি ভারতের আধিপত্যমূলক মনোভাব ঐতিহ্যগতভাবে এ অঞ্চলে সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
প্যানেল আলোচক হিসেবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ধনী-গরিব সবারই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সফল পাওয়া উচিত। এ নীতি আন্তঃদেশীয় ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর জনগণ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারলেও এ অঞ্চলের চিত্র ভিন্ন। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতেও ভিসা ছাড়া যাতায়াত নিশ্চিত করা না গেলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন কঠিন।
ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রবীণ ঝা বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে বর্তমানে নতুন করে ভাবতে হবে। এর কার্যকর ফল পেতে সার্কসহ এর আওতায় থাকা বিদ্যমান আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সংস্কার করতে হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়া ও চীনের বাণিজ্য বাড়ছে। এসব বাস্তবতা মাথায় নিয়ে নীতি গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন বলেন, বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ায় এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভারতকেই অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী কোনো দেশের ওপর প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
সমাপনী অধিবেশন
সমাপনী অধিবেশনে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতায় অনেক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলার সুযোগ থাকার পরও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও রাষ্ট্র স্বার্থের কারণে তা বাস্তব রূপ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশগুলোর নাগরিক সমাজকে নিজ নিজ দায়িত্বশীলদের সামনে ইস্যু করে তুলে ধরে সমাধানের জন্য চাপ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের এক টেবিলে বসে এটা খুঁজে দেখা উচিত, কেন সার্ক কার্যকর করা গেল না।
নিজের ৮৮ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে রেহমান সোবহান শৈশব ও তরুণ বয়সের স্মৃতি স্মরণ করেন জানান, উপনিবেশ সময়ে এর অব্যবহিত পরেও বিশ্বের অন্যতম প্রধান অভিন্ন অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া। এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলে বাধা ছিল না। শিক্ষা বা চিকিৎসা নিতে যে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারত। একক শ্রম অঞ্চল হিসেবে যেখানে ইচ্ছা গিয়ে কাজ করতে পারতেন। মানুষে মানুষে যোগাযোগ ছিল, যা আজকের ইউরোপিয়ান অঞ্চলের থেকেও ভালো ছিল। কিন্তু দেশ বিভাগের পর দেশগুলো প্রত্যেকে আলাদা হয়ে শুধু মানুষে মানুষে নয়, সবকিছুতে আলাদা হয়ে গেছে। ফলে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়েছে। চাইলে দেশগুলোর জাতীয় নেতারা একেকটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তা হচ্ছে না, যেমনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্য সংস্থা আসিয়ান পারছে। রেহমান সোবহানের মতে, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, যোগাযোগসহ বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ আছে। সহযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যেকেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, এ অঞ্চলের ব্যবসা সম্ভাবনা নিয়ে এখনও কোনো কাজই হয়নি। মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
Posted ১২:১৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin