শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘শুধু সবজিই খাওন লাগবো, মাছ আর কিনতে পারুম না’

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

‘শুধু সবজিই খাওন লাগবো, মাছ আর কিনতে পারুম না’

সাপ্তাহিক ছুটির দিন সবজির বাজারে গিয়ে স্বস্তির হাসি শ্রমিক সুজনের মুখে। শীতের আমেজে কমেছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। তবে মাছের বাজারে গিয়েই কপালে চিন্তার ভাঁজ তার।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে সবজির দামে স্বস্তির কথা জানালেও মাছের বাজার চড়া দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

কেরানীগঞ্জের পোশাক শ্রমিক সুজন বললেন,বাজারে সবজির দাম অনেক কমেছে। তবে মাছের যে দাম তাতে শুধু সবজিই খাওন লাগবো, মাছ আর কিনতে পারুম না।

কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, বাজারে উঠতে শুরু করেছে সবধরনের শীতকালীন সবজি। এতে কমতে শুরু করেছে দাম। কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা,পটোল ৬০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

এ ছাড়া শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, আলু ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, টমেটো ৮০ থেকে ৯০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা ও ধনেপাতার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, ডাঁটা শাক ১৫ টাকা, ও লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে সব ধরনের শাক-সবজির দাম কমেছে। মূলত শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতির দিকে।

সেলিম নামে কারওয়ানবাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান,পানির দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। শীত পড়তে শুরু করায় শীতকালীন সবজির যোগান বাড়ছে বাজারে। এতেই পড়ে গেছে দাম।

আর ক্রেতারা জানান, শীতকাল আসায় বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। দাম কমছে সবধরনের সবজির।

তবে পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কমেনি কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে। আর পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে অন্য সবজির সরবরাহ বাড়লেও কাঁচা মরিচের সরবরাহ কিছুটা কম। তাই দাম বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে যাবে।

নতুন করে বাড়েনি পেঁয়াজের দাম। বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি দেশি রসুন ২২০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে।

একদিকে যখন সবজির বাজারে দাম কমার খবরে স্বস্তিতে ক্রেতারা, তখন অন্যদিকে মাছের বাজারে এখনও ছুটছে ঘাম। দাম বেড়েছে দেশি মাছের। তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে চাষের মাছের দাম।

বাজারঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শোল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কৈ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, শিং ১ হাজার ২০০ টাকা ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

এ ছাড়া প্রতিকেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৮০ টাকা, পাবদা ৪২০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর বাজারে কিছুটা কমে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা ও ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

 

ক্রেতারা জানান, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সবধরনের মাছের দাম। কেজিপ্রতি মাছের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। যা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

রাকিব নামে এক ক্রেতা বলেন, সবজির বাজারে কেবল স্বস্তি। প্রতিটি মাছের দাম বাড়তি। বিশেষ করে দেশি মাছের দাম আকাশছোঁয়া।

দাম বাড়ার কথা শিকার করেন বিক্রেতারাও। তারা জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ বাজারে আসতে পারছে না। তাই দাম কিছুটা চড়া।

বাদশা বেপারী নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন শীতকাল চলে আসছে। দেশের খাল-বিল-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশি মাছের যোগান কমছে। বাজারে আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে।

এদিকে বাজারে দাম কমেছে লাল লেয়ার, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির। কেজিতে ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে থেকে ১৮০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়।

প্রতিকেজি লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। ছবি: সময় সংবাদ

কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের করিম মোল্লা জানান,পাইকারি বাজারে দাম কমায় খুচরা পর্যায়েও কমেছে মুরগির দাম। বেড়েছে সরবরাহও।

তবে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভারতীয় ডিম দেশে আসার পর ডজনে কমেছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাসের ডিম ২১০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে চালের। কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। বাজারে প্রতিকেজি আটাইশ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা ও মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। প্রতিকেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।

বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। শুল্ক কমিয়ে লাভ নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে না।

এর আগে বুধবার (১ নভেম্বর) চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টন চিনিতে শুল্ক কমানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ৩ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়ায়। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]