বুধবার ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ বৃষ্টিতে নষ্ট ১০ কোটি টাকার কাঁচা ইট

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের কারণে হঠাৎ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে মানিকগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটার কাঁচা ইট। গেল বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টির ফলে ভাটাগুলোতে কেটে রাখা কাঁচা ইট পানিতে ভিজে মাটিতে মিশে গেছে। অনেকে পলিথিন দিয়ে ইট রক্ষার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইটভাটার মালিকরা।

এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি টাকার মতো দাবি ইটভাটা মালিক সমিতির। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সুদ মওকুফ চেয়েছেন ভাটা মালিকরা।

সরেজমিনে মানিকগঞ্জের এআরসি-২, ডায়না, আনিকা, এনবিসি, গ্রামীণ, সূয়াপুর ব্রিকস লি, বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট গলে পটে পড়ে আছে। যেগুলো নিচে রাখা হয়েছিল সেসব কাঁচা ইটগুলো গলে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কিছু কাঁচা ইট খামাল করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এখন আবহাওয়া ভালো হওয়ায় শ্রমিকরা নতুন ইট বানানোর জন্য কাজ শুরু করেছেন।

এআরসি-২ ইটভাটার মালিক আশরাফ আলী জানান, আমি সাত লাখ কাঁচা ইট তৈরি করেছিলাম পোড়ানোর জন্য। কিন্তু দুইদিনের বৃষ্টিতে ৮০ ভাগই নষ্ট হয়ে গলে গেছে, ভেঙে গেছে, রেইন স্পট হয়ে গেছে। সব ভাটা মালিকের অবস্থাই এমন হয়েছে। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়ে গেল।

ম্যানেজার আলী হোসেন জানান, এখন এমন বৃষ্টি হবে তা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিলো। তাছাড়া আমরা যাদের কাছ থেকে অগ্রিম ইট বিক্রির টাকা নিয়েছি তারাও ইটের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। পুনরায় নতুন ইট তৈরি করতেও দুই থেকে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। সব দিক থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

গ্রামীণ ব্রিক্স এর ম্যানেজার আমিনুর রহমান জানান, রোদে শুকিয়ে যেসব ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল, অসময়ে বৃষ্টির পানিতে ভাটার প্রায় ৩ লাখ কাঁচা ইট পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি আসার আগেই আমরা পলিথিন দিয়ে ইট ঢেকে দিলেও তা টিকাতে পারি নাই। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকার পর নতুন করে ইট তৈরির কাজ করছেন ভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা। ইটভাটার শ্রমিক নয়ন জানান, গত চার দিন আমাদের ভাটার কাজ বন্ধ ছিল। ডায়না ভাটায় আমরা ৪০ থেকে ৪৫ জন আছি যারা প্রতিদিন কাজ শেষে বেতন পাই। কাজ বন্ধ থাকায় তখন বেতনও পাইনি। নিজের টাকা খরচ করে চলেছি। গতকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

আরেক শ্রমিক সোলায়মান জানান, বৃষ্টিতে কোম্পানির খুব ক্ষতি হয়েছে। সব ইট নষ্ট হয়েছে। এগুলোকে আবার পট (কাঁচা ইট রাখার জায়গা) থেকে নিয়ে সেগুলোকে মল্ডিং করে নতুন করে ইট বানাতে হবে। নতুন ইট উৎপাদনে যেতে আরো দুই সপ্তাহের মতো লাখবে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. বশির রেজা জানান, গতবারের মতো প্রতিটি ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য কাঁচা ইট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে গেল বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রতিটি ভাটায় গড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মালিকদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা মতো। মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার ১২০টি ইটভাটার মধ্যে এ মৌসুমে কার্যক্রম চালু আছে ৭০টি ভাটায়। জেলার বেশির ভাগ মালিককে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ভাটার ব্যবসা করতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভাটা মালিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণের সুদ মওকুফ করার দাবি জানান তিনি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৩৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]