শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘দাফনের’ ৬ মাস পর স্বামীসহ বাড়ি ফিরলেন ববি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

‘দাফনের’ ৬ মাস পর স্বামীসহ বাড়ি ফিরলেন ববি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দাফনের প্রায় ৬ মাস পর নিজের বাবার বাড়ি ফিরলেন গৃহবধূ ববিতা। বাড়ি থেকে একা গেলেও ফিরে এলেন স্বামীকে নিয়ে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে ফিরেন তিনি।

ববিতা খাতুন শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল-চৌকা গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে। তার স্বামী মাজেদ আলী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত নারীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার দেখে মরদেহটি ববিতার বলে চিহ্নিত করে তার পরিবার। পরবর্তীতে পুলিশ ফকিরপাড়া কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করে সদর থানা পুলিশ। পরে ওই মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলার এনামুল হকের ছেলে রুবেল আলী নামে এক যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। ৪০ দিন জেল হাজতে থাকার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেন রুবেল। এ মামলায় ফাহিম ও বিপ্লব নামে আরো দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। তবে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই মামলার কার্যক্রম এখনো চলমান। এ অবস্থায় ববিতা এলাকায় ফিরে আসায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জরজেস আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এলাকাবাসী জানে ববি খাতুন মারা গেছেন। এ ঘটনায় একজন জেলও খেটেছেন। হঠাৎ গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ববিতা খাতুন তার স্বামীকে নিয়ে গ্রামে ফিরছেন। জীবিত অবস্থায় ববিতাকে দেখে সবাই অবাক।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাজল আহমেদ বলেন, ববিতা অনেক দিন পরে বাড়িতে ফিরেছে। তার পরিবার এতদিন দাবি করেছিল, সে মারা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রুবেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, টাকা নিয়ে ফাহিম নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় রুবেল। একপর্যায়ে ওই যুবকের মোবাইল কেড়ে নেন রুবেল। পরে ফাহিমকে স্বামী দাবি করে সেই ফোন ফেরত পেতে রুবেলের মোবাইলে কল দেন ববিতা। পরবর্তীতে ববিতাকে ফোনটি দিয়ে আসেন রুবেল। ওইদিন রাতেই নিখোঁজ হন ববিতা। তার কয়েকদিন পরে এক নারীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ববিতার পরিবার মরদেহটি তার মেয়ের বলে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় মামলা হলে ববিতার কল লিস্ট দেখে রুবেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

রুবেল বলেন, ববিতা নিখোঁজ হওয়ার পরে অভিযোগ করা হয়, আমি নাকি গুম করেছি। তিনদিন পরে সদর উপজেলার একটি পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহটি ববিতার বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ৪০ দিন জেল হাজতে থাকার পরে এখন জামিনে মুক্ত আছি। কিন্তু মামলা এখনো চলছে।

তিনি আরো বলেন, আমি কোনো অপরাধ না করেও এতদিন জেল হাজতে থাকতে হয়েছে। অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। বুধবার শুনতে পাই, ববি বাড়ি ফিরেছে। এই খবরে স্বস্তি পেয়েছি। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে।

ববি খাতুন বলেন, রুবেল ও তার সহযোগীরা আমাকে বাড়ি থেকে মনাকষা এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। পরে গোমস্তাপুরে নিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে নওগাঁয় ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যান। এলাকাবাসী আমাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে সেখানের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাকে বিয়ে করে এতদিন ঢাকায় ছিলাম। এসময় ববিকে প্রশ্ন করা হয়, বাড়িতে কেনো যোগাযোগ করেননি? তবে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মিন্টু রহমান বলেন, পুলিশ বস্তাবন্দি মরদেহটি উদ্ধার করলে ববিতার পরিবার দাবি করে, মরদেহটি তাদের মেয়ের। পরে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। গ্রেফতার করা হয় রুবেল নামে একজনকে। তিনি এখন জামিনে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ছয়মাস আগে বস্তাবন্দি যে নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]