মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে গোলাগুলি, টেকনাফে ঢোকার চেষ্টা রোহিঙ্গাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:   |   সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

রাখাইনে গোলাগুলি, টেকনাফে ঢোকার চেষ্টা রোহিঙ্গাদের

মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি আর সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তবে একজন রোহিঙ্গাও যাতে সীমান্ত ডিঙাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। কয়েক দিনে শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে বিজিবি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, নাফ নদীর ওপারে বেশ কয়েকটি নৌকায় দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে।

গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ২৩ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এরমধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাস্তুচ্যুত হয়ে। রোহিঙ্গা–ঢলের ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে গতকাল বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী তেলীপাড়া এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে মাথায় হেলমেট, গ্লাভস, গুলিসহ অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপরদিকে উখিয়া সীমান্ত থেকে শনিবার উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।

২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। এরই মধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার দিবাগত রাত ৩টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। পরদিন সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুইজন নিহত হন। নিহত দুইজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ সময় বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন। তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন।

এপারে আসতে অপেক্ষায় শত শত রোহিঙ্গা

দিনের বেলায় নাফ নদীতে ছোট ছোট ডিঙিতে রোহিঙ্গাদের ভাসতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সতর্ক পাহারার কারণে দিনে ঢুকতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। রাতে সুযোগ বুঝে নাফ নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষা করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলেন, নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের শিলখালী ও বলিবাজার এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। এতে ওই এলাকায় থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফের মাঝেরপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কানজড় পাড়ার বিপরীতে ওপারে নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। কয়েক ঘণ্টা পর পর তারা এপারে আসার চেষ্টা করে। তখন বিজিবি বাঁশি বাজালে তারা আবার ওপারে চলে যায়।

লম্বাবিলের বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, আমাদের এলাকা থেকে ওপারে কিছু ডিঙি দেখা যাচ্ছে। প্রতিটিতে ১৫-২০ জন করে মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্রমতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাবোঝাই চার-পাঁচটি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার সকালে অস্ত্রসহ ২৩ জন রোহিঙ্গাকে ধরে বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সতর্ক পাহারায় আছি।

টেকনাফের হোয়াইকং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, তাদের এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করছে। গত তিন দিনে ছয়জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটক করে ফেরত পাঠিয়েছে। আরো কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করছে বলে তারা শুনেছেন। এ জন্য তার এলাকার সব ইউপি সদস্যকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কোনোভাবেই যেন একজন রোহিঙ্গাও অনুপ্রবেশ করতে না পারে।

বালুখালী ও উনছিপ্রাং আশ্রয়শিবিরের কয়েকজন মাঝি বলেন, কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে যুদ্ধ চলছে। এসব এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা আছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ওপার থেকে যাতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক পাহারায় রয়েছে। এরই মধ্যে এপারে আসতে চেষ্টা করা অনেক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুর লাহিল মাজিদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওপার থেকে একজন রোহিঙ্গাও যাতে ঢুকতে না পারে, এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় রয়েছেন।

অস্ত্রসহ গ্রেফতার ২৩ রোহিঙ্গার রিমান্ড শুনানি আজ

মঙ্গলবার উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রধারী ২৩ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা তাদের আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করে। পরে শুক্রবার দুপুরে ওই রোহিঙ্গাদের আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা করে বিজিবির এক সদস্য। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, পালিয়ে আসা এই ব্যক্তিরা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য। সশস্ত্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির প্রধান হচ্ছেন নবী হোসেন।

বিজিবির সূত্র জানায়, এই নবী হোসেন সীমান্তে মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধের হোতা, যাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা আছে।

উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, ২৩ রোহিঙ্গার অস্ত্রের উৎস, সীমান্তের আশপাশে তারা কেন ছিল, তা আজ সোমবার তাদের রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করা হবে।

মাথায় হেলমেট, গ্লাভস পরা মরদেহ উদ্ধার

উখিয়া উপজেলার বালুখালী সেতুর নিচ থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে এটি উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের কোমরে থাকা বেল্ট থেকে ৯৯টি গুলি ও দুইটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, নাফ নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা একটি খালে জোয়ারের পানিতে মরদেহ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তারা পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর দেন। খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওসি আরো বলেন, মরদেহর মাথায় হেলমেট ও হাতে গ্লাভস রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহটি তিন-চার দিন আগের। পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]