নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
‘বিহুরে লগন মধুরে লগন, আকাশে বাতাসে লাগিল রে। চম্পা ফুটিছে চামেলী ফুটিছে, তার সুবাসে ময়না আমার ভাসিল রে।’ বাঙলির ইতিহাস আবেগের। এ আবেগ যেমন মানুষে মানুষে ভালোবাসার, তেমনি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতিরও। শীতের শেষে মাঘের বিদায় আজ। বসন্তের হাওয়ায় ফাল্গুন দরজায়। আগেই শুরু হয়ে গেছে আবহাওয়ায় পালাবদল। মৌসুমের বর্তমান সময়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। অনেক এলাকায় শীতের কুয়াশা প্রায় কেটে গেছে। দিনমান উজ্জ্বল সূর্য কিরণে রোদের তেজে ঘামানোর অবস্থা। চলতি সপ্তাহ জুড়ে তাপমাত্রা ক্রমে বৃদ্ধিরই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়াই জানান দিচ্ছে- ‘বসন্ত এসে গেছে…’।
মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানিয়ে দিয়ে যায়, সত্যি সত্যিই বসন্ত ঋতুর রাজা। উদাস আকুল মন নেচে ওঠে দখিনা হাওয়ায়। সৌরভ তার ভরে দেয় মন-প্রাণ। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। ন্যাড়া গাছগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। শিমুল আর পলাশ গাছে ফুটেছে রঙিন ফুল; ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে গ্রামের মেঠো পথকে করে দিচ্ছে রঙিন।
বসন্তের পাতাবিহীন ন্যাড়া ডালে আগুনের লেলিহান রক্ত আভায় শোভিত হয়ে এখন যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে আরো রঙিন করে তুলেছে টিয়া, ময়না, হলুদিয়াসহ নানান জাতের পাখির কলতান। আসলেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনে প্রাণে জাগে নতুনের ছোঁয়া। চারপাশে পাখির কলকাকলি আর রক্তিম কৃষ্ণচূড়া সবুজের মাঝে সৃষ্টি করে এক অপরূপ সৌন্দর্য।
মানুষের জীবনে ঋতুরাজ বসন্ত নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। সে আবাহনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে পহেলা ফাল্গুনে। বসন্তের আগমনে তাই হলুদ, কমলা, লাল, বেগুনি, বাসন্তী রঙের ক্যানভাসে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পারেন।
বাংলাদেশ বা বাঙালি সমাজে ঋতুরাজ বসন্ত আসে নানা রঙ ছড়িয়ে। প্রকৃতিতে তাই লেগেছে রংয়ের ছোঁয়া। দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। তাই বসন্তের আগমনে সুরে সুরে ভেসে আসে ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা। কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, বর্তমান সময়টাকে শীতের বিদায়লগ্ন বলা যায়। আগামীকাল ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু এলাকাতে বৃষ্টি হতে পারে এবং এ বৃষ্টিপাতকালে রাতের যে তাপমাত্রা, সেই রাতের তাপমাত্রা আরো ১ থেকে ২ ডিগ্রি বা স্থানভেদে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বেড়ে যেতে পারে এবং ঐ সময়ে মানুষের মধ্যে শীতের কোনো অনুভূতি আর ঐ ভাবে থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে, এই মুহূর্তে খুব উল্লেখযোগ্য শীত নেই। রংপুর বিভাগের একটি স্টেশন বাদ দিয়ে বাকি সবগুলো স্টেশনের রাতের যে তাপমাত্রা, সেই রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। সামগ্রিকভাবে যদি আমরা বলি যে, এই মুহূর্তে দেশে শীতের অনুভূতি ঐ ভাবে বিরাজ করছে না। আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
Posted ৭:১০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin