রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলের যন্ত্রাংশ কেনায় কোটি টাকা লুটপাট, দুদকের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

রেলের যন্ত্রাংশ কেনায় কোটি টাকা লুটপাট, দুদকের অভিযান

রেলের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে সরকারের ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬ টাকার লুটপাটের অভিযোগ ছিল পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। অভিযানকালে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে টিম।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুদকের চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অফিস থেকে ঐ অভিযান চালানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রেলওয়ের কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১ ও রাজশাহী দুদক অফিসের পৃথক টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। শিগগিরই দুদক টিম কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে দুদকের, চট্টগ্রাম-১ অফিস হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে টিম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিফটিং জ্যাক, ড্রিলিং মেশিন এবং কাটিং জ্যাক ক্রয় সংক্রান্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় অত্যন্ত উচ্চমূল্যে পণ্যগুলো ক্রয় করা হয়েছে বলে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর টিম বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে এলইডি লাইট এবং এলইডি ল্যাম্প কেনার তথ্য সংগ্রহ করে। এলইডি লাইটসমূহের ক্রয়মূল্যও অসংগতিপূর্ণ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে অপর অভিযানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কেনাকাটায় অনিয়মের অনুরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের রাজশাহী অফিসের এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে টিম মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম), বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহী -এর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করে। রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে টিম।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের ১৫টি কার্যালয়ের কেনাকাটায় সরকারের ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬ টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ২০১৮–১৯ অর্থবছরে অস্বাভাবিক দামে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) অধীন ট্র্যাক সাপ্লাই কর্মকর্তার (টিএসও) কার্যালয় চার ধরনের ২৮টি যন্ত্র ক্রয় করা হয়। এসব যন্ত্রের প্রকৃত বাজারমূল্য সাড়ে ১৮ লাখ টাকা। অথচ এগুলো কিনতে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি টাকা। কেনাকাটায় এই অনিয়ম ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি অবশ্য ধরা পড়ে ২০২০ সালে সরকারের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় (সিএজি) ২০২৩ সালের জুন মাসে।

আবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি শাখা রয়েছে চট্টগ্রামে, যা জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় হিসেবে পরিচিত (আর অ্যান্ড আই শাখা)। এই শাখার একটি কক্ষ মেরামতের নামে মালামাল কেনাকাটা দেখিয়ে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা তছরুপ (আত্মসাৎ) করা হয়েছে। মোট ৫৪ ধরনের মালামাল কেনার নামে কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা মিলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। কখনো উচ্চমূল্যে পণ্য কেনা হয়েছে, আবার কখনো পণ্য না কিনেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পূর্বাঞ্চলের মতো পশ্চিমাঞ্চলেও কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যেমন- ৮ ইঞ্চি পাইপ রেঞ্জ কেনা হয়েছে ২৯ গুণ বেশি দামে, আর ১২ ইঞ্চির পাইপ রেঞ্জ কেনা হয়েছে ৩০ গুন বেশি দামে। এভাবে ১৯ ধরনের ছোট যন্ত্র কেনায় বড় অনিয়ম করেছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অধীন লালমনিরহাটের সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলীর কার্যালয়। এসব মালামাল ক্রয়ে কোনোটিতে বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ, আবার কোনোটিতে ৩০ গুণ টাকা খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। একটি অঞ্চল যমুনা নদীর পূর্ব পাশে, যা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে(ঢাকা–চট্টগ্রাম–সিলেট–ময়মনসিংহ বিভাগ) হিসেবে পরিচিত। আর যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে গঠিত (রাজশাহী–রংপুর–খুলনা বিভাগ)।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]