নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট
মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘আরিফাইল মসজিদ’। ১৬৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অপরূপ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয় মসজিদটি স্ব-মহিমায় টিকে আছে প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন আরিফাইল মসজিদ।
সরাইল উপজেলা সদরের আরিফাইল গ্রামে এখনো ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর অপরূপ স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য সমৃদ্ধ দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৬৬২ সালে। এলাকায় জনশ্রুতি অনুযায়ী মসজিদটি নির্মাণ করেন দরবেশ শাহ আরিফ। তার নাম অনুযায়ী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এর পাশেই রয়েছে জোরা কবর যা আরিফাইল মাজার নামে পরচিত। বর্তমানে প্রাচীন এই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা মনোবাসনা পূরন করার জন্যে এসে এই মসজিদটিতে নামাজ পড়েন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদর থেকে রিকশা অথবা হেঁটে আধা কিলোমিটার দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করে আরিফাইল গ্রামে প্রবেশ করা যায়। প্রবেশকালে চোখে পড়বে বিশাল আকার এক দীঘি। এই দীঘিটি এলাকাবাসীর কাছে সাগরদীঘি হিসেবে পরিচিত। দীঘিটির দক্ষিণ পাড়েই অবস্থিত প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন আরিফাইল মসজিদটি।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ফুট এবং ৩০ফুট প্রস্ত। মসজিদটি সংরক্ষণের জন্যে টাইলস এবং চুনকাম করা হয়েছে। মসজিদটির চুনকাম করা হলেও পূর্বের কঠামো ঠিক রাখা হয়েছে। মসজিদটির বাহিরে উপরি অংশে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। ভেতরের অংশ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভেতরে কারুকার্যের মধ্যে পদ্মফুল আঁকা রয়েছে। রয়েছে চার কোনার ক্ষোপ। প্রবেশ এবং প্রস্তানের রয়েছে একাধিক পথ। দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন এই মসজিটির সঠিক ইতিহাস স্থানীয়দের কাছে জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে গায়েবি মসজিদ হিসেবে পরিচিত। তাই প্রতিদিন অধিক সোয়াব লাভের আশায় বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা এসে এই মসজিদটিতে নামাজ পড়েন।
স্থানীয়রা মসজিদের বাহিরের অংশে নামাজ পড়ার স্থানে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্যে একটি ছাউনি নির্মাণ করার দাবি জানান।
ইয়াকুব আলী নামে এক মুসল্লি বলেন, আরিফাইল মসজিদটিকে সবাই গায়েবি মসজিদ নামেই চিনে। এখানে মানুষ কোনো কিছুর জন্য মানত করলে সে মানত অব্যশই পূরণ হয়। তবে এই মসজিদের ইতিহাস কেউ জানে না। এটা কত শত বছর পুরোনো এটা কেউ জানে না।
বরকত হোসেন নামে আরেক মুসল্লি বলেন, এই মসজিদের কথা আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি। তারাও বলতে পারে না এই মসজিদ কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তবে এটি এখন আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে মানুষ আসে মানত করার জন্য। এখানে যদি কেউ মানত করে সেই মানত আল্লাহ পূরণ করেন। আমরা চাই এই মসজিদের বাইরেও যেন মানুষ নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে এই ছাউনি করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাই।
মসজিদের পাশের প্রবীন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল শুক্কুর জানান, এই মসজিদের ব্যাপারে ৫-৬ শ’ বছরের আগেও কেউ বলতে পারবে না। আমার বয়স এখন ৮৮। আমার দাদা বেঁচে গেছেন ১০৪ বছর বয়সে, তারাও কখনো এই মসজিদের ইতিহাস বলতে পারেনি। আগের দিনে আমাদের চাচা দাদারা মসজিদের হেফাজত করেছে। এখন আমরা করছি। গ্রামের সবাই মিলের মসজিদের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
এদিকে মসজিদটির পাশেই জোড়া কবর মাজার স্থানীয়দের ধারণা দরবেশ শাহ আরিফ এবং তার স্ত্রী এই জোরা কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। এটি এখন মাজার হিসেবে স্থান পেয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ নানা মানত নিয়ে আসেন বলে জানান মসজিদটির খতিব।
আরিফাইল মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আব্দুল মজিদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এই মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী। এই মসজিদের প্রতিদিন শত শত মানুষ নামাজ আদায় করেন। জুম্মার দিন এই মসজিদে জায়গা থাকে না। মানুষ কষ্ট করে বাইরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। এই মসজিদের বাইরেও যেন মানুষ নামাজ পড়তে পারেন, সেজন্য খোলা জায়গাতে এই ছাউনি করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাই আমরা।
সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর জানান, মসজিদটি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধিনে। মসজিদটির পাশে জোড়া কবর রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে মানত করছেন। টাকা-পয়সা দান করছেন। প্রতিমাসে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এই আয় সরকারি কোষাগারে জমা রেখে মসজিদটির উন্নয়ন কাজ তরন্বিত করার আহবান জানান তিনি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট তৎকালিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেওয়ানুর রহমান মসজিদটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেন।
Posted ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin