নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন জেলা পাহাড় কন্যা খাগড়াছড়ি। নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ উপজেলা মাটিরাঙ্গা।
উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তরে ৪৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ মাটিরাঙ্গা-তানাক্কপাড়া সড়ক। এ সড়কে প্রতিদিন ৭ ইউপির (তাইন্দং, তবলছড়ি, বর্ণাল, আমতলী, গুমতি, বেলছড়ি ও মাটিরাঙ্গা সদর) প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্তময় সীমান্ত সড়ক।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কোচ, নাইট কোচ চলাচল করে এই সড়কে। নব্বই দশকে সড়কটি এইচবিবি (সলিং) এবং বিংশ শতাব্দির শুরুতে কার্পেটিং করা হয়। নির্মাণ শেষে গত ২৯ অক্টোবর ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সড়কে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য গোমতি সেতুসহ ৩টি দৃষ্টিনন্দন গার্ডার সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন।
বর্তমান সময়ে দৈর্ঘ্য ও এলাকার আয়তন অনুসারে ব্যস্ততম একমাত্র এক লেনের সরু সড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটি সরু ও ঘন ঘন বাঁক থাকায় গাড়ি ক্রসিং কিংবা ওভারটেক করার সময় কার্পেটিং সীমানার বাইরে চলে যায়। এতে প্রায় সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। জরুরি ভিত্তিতে টার্নিং পয়েন্ট সোজা ও সড়ক প্রশস্ত করা না হলে বর্ষায় সড়কটি চলাচলে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
এখন পর্যন্ত সীমান্তবর্তী এই সড়কটি ধরে দুইটি খাদ্য গুদাম, ২টি বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও ২৫ টি বিওপি ক্যাম্প, একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ থানা, একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, একটি পুলিশ ফাঁড়ি, ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার আংশিক লোক প্রতিদিন চলাচল করে। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এই জনপদে ৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিও এবং নন এমপিও ভুক্ত প্রায় ১০টি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কলেজ, একটি আলিম মাদরাসা, দুইটি ফাজিল মাদরাসা ও বেশ কয়েকটি ইবতেদায়ী মাদরাসা ছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট ও এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ সব প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কার্যক্রম উপজেলা সদর থেকে নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে সংশ্লিষ্টদের উপজেলা সদরে আসতে হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়া সক্রিয় কোনো হাসপাতাল না থাকায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ সড়ক দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে হয়। মিল কারখানাহীন কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যেমন, সিজনাল ফল, ধান, আম, কাঁঠাল, কচুরছড়া, আদা, আনারস , লিচু, বারমাসি ফল কলা, পাহাড়ি বাঁশ, কাঠ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। রেল, জল, আকাশ কিংবা বিকল্প কোনো পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে সরু এক লেনের সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এক কথায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সামরিক, আধা-সামরিক, বেসামরিক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশাসনিক সব কাজে চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি।
এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী তাইন্দং ইউপির তানাক্কাপাড়ার বাসিন্দা আলকাছ আল মামুন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করে। এতে ক্রসিংয়ে অনেক অসুবিধা হয়। সড়কটি প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে। তাছাড়া পর্যটন সম্ভাবনাময় ভগমান টিলায় পর্যটক বাড়বে। এতে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হবে।
তবলছড়ির বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, রাস্তা সরু হওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দিন দিন সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। এ সড়ক দুর্ঘটনা এখন যেন ধারাবাহিক রুটিনে পরিণত হয়েছে। সড়কে দুর্ভোগ লাগবে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তার দুই দিকে সম্প্রসারণ করা দরকার বলে কন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্যকর্মী আমিরুল ইসলাম বলেন, পেশাগত কারণে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করতে হয়। নিরাপদে পথ চলতে সড়ক প্রশস্ত করা খুবই জরুরি।
এছাড়াও সিএনজি চালক মো. আলী বলেন, রাস্তা অনুসারে গাড়ি বেশি, শুধু সিএনজি চলার জন্য এ রাস্তা উপযোগী। বড় গাড়ি বিশেষ করে যাত্রীবাহী বিআরটিসি, শান্তি পরিবহন, বিজিবির থ্রি টন ও মালবাহী ট্রাক চলার সময় রাস্তায় অন্য গাড়ি ক্রস করার জায়গা থাকে না। কাঠের গাড়িগুলো সামনে পড়লে সাইড দিতে অনেক সময় ২০ থেকে ৩০ ফুট পেছনে আসতে হয়। রাস্তা বড় হলে এ সমস্যা হতো না বলে মন্তব্য করেন এ পরিবহন চালক।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে সড়ক প্রশস্ত করণের লক্ষ্যে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের কাছে প্রস্তাবনা পাঠনো হয়েছে। খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, এরইমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। মিটিংয়ের পর বলা যাবে। ইতিপূর্বে জেলার মাটিরাঙ্গা-তানক্কাপাড়া সড়ক ও গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি সড়ক পরিদর্শন করেছি। গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি সড়কে কিছু কাজও করা হয়েছে।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সড়ক, মাটিরাঙ্গা-তানাক্কপাড়া, গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি, মারিশ্যা-বাগাইছড়ি ও সাজেক সড়কসহ পর্যায়ক্রমে জেলার ১২ ফুটের সব সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হবে সঠিকভাবে বলতে না পারলেও খুব শিগগিরই আপনাদেরকে সুসংবাদ দিতে পারবো বলে আশা করছি।
Posted ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin