নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ | প্রিন্ট
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদীর ওপারে বিমান ও হেলিকপ্টারের চক্করের দেখা মিলেছে। একইসঙ্গে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে টেকনাফ সীমান্তজুড়ে।
সোমবার দিনভর নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের কয়েকটি গ্রামে কালো ধোঁয়ারও দেখা মিলেছে। সকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা) এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান।
তিনি জানান, গত ২৭ এপ্রিলের পর থেকে বিস্ফোরণের কোনো শব্দ শোনা না গেলেও সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি বদলে গেছে। টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার নাফ নদের সোজা পূর্বে মিয়ানমারের ভেতর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। ওই এলাকায় দিনভর বিমান ও হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে মংডু শহরের উত্তর পাশে কাওয়ার বিল চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকে আশিকাপাড়া, আরশিয়াপাড়া ও বসুয়ার এলাকায় বিমান ও হেলিকপ্টার দিয়ে মর্টারশেল নিক্ষেপ করে হামলা চালাচ্ছে জান্তারা। এতে টেকনাফের চৌধুরীপাড়া এলাকায় ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে এবং বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে।
টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলার শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। বেশ কিছুদিন গোলার শব্দ শোনা না গেলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিকট গোলার শব্দ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, বোমা এসে এপারে পড়ছে। এ ধরনের গোলার আওয়াজ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা সামি জাবেদ বলেন, মিয়ানমারের মর্টার শেলের শব্দে মনে হচ্ছে যেন ঘরের সামনে পড়ছে। সোমবার সকাল থেকে গোলাগুলির বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ পৌর শহর।
টেকনাফ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড নাইট্যং পাড়ার বাসিন্দা ইদ্রিস ওয়াহিদ বলেন, সকাল থেকে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণ অনেক ভয়ানক হচ্ছে। আমরা যারা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করছি তারা খুব আতঙ্কে রয়েছি।
সকাল থেকে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়ে টেকনাফের পৌরভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রাখাইনে চলমান যুদ্ধে এপারে অনেক ভারী গোলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। নাফনদীর সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফনদী এলাকা এবং সীমান্ত সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা টহল বাড়িয়েছে।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তাদের সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। তবে নাফনদীর বাংলাদেশ সীমান্তে মাদক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যের উত্তর মংডু টাউনশিপে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) একটি সদর দফতর আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সৈন্যরা শহরে ঢুকে পড়েছে। সদর দফতর পতনের সময় অন্তত ৫০ জান্তা সৈন্য আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিছু জান্তা সৈন্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শনি ও রোববার পৃথকভাবে এসব সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সংখ্যা অন্তত ১২৮ জন।
Posted ২:১৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin